Jaijaidin

আজ পর্দা উঠছে কান উৎসবের

Shah Alam Soulav
6 Min Read

যাযাদি ডেস্ক

চলচ্চিত্রের মানুষ যে আয়োজনের জন্য তীর্থের কাক হয়ে অপেক্ষা করেন, সেই কান উৎসব শুরু হচ্ছে আজ। ভূমধ্যসাগরের তীরে ফ্রান্সের কান শহরে পর্দা উঠছে উৎসবটির ৭৮তম আসরের। এবারের আসরের আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন কামরুল ইসলাম।

উদ্বোধনী আসরে যা থাকছে

স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশি সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিট) শুরু হবে কানের উদ্বোধনী আয়োজন।

এতে সম্মানসূচক স্বর্ণপাম দেওয়া হবে কিংবদন্তি আমেরিকান অভিনেতা ও নির্মাতা রবার্ট ডি নিরোকে। যিনি ১৪ বছর আগে ২০১১ সালে কানের জুরিপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আগামীকাল আবার একটি মাস্টারক্লাসও নেবেন তিনি।

এবার কানের উদ্বোধনী ও সমাপনী আসর সঞ্চালনায় রয়েছেন ফরাসি অভিনেতা লওরা লাফি।

উপস্থিত থাকবেন উৎসবের সভাপতি ইরিস নোব্লোক ও উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমোঁ। বরাবরের মতো বিশেষ অতিথিদের বরণ করে নেবেন এবারের আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান বিচারক জুলিয়েট বিনোশ। কানের ইতিহাসে চতুর্থ নারী হিসেবে জুরিপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
তাঁর আগে এ নজির গড়েছিলেন যথাক্রমে অলিভিয়া দে হাভিল্যান্ড, সোফিয়া লরেন ও গ্রেটা গারউইগ।

উদ্বোধনী ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হবে আমেলি বনিনের কমেডি-ড্রামা ‘পাতি আঁ জো’। উদ্বোধনী আয়োজনে লাল গালিচায় হাঁটবেন আমেরিকান মডেল বেলা হাদিদ। সুইস ঘড়ির ব্র্যান্ড ‘চোপার্ড’-এর প্রতিনিধি হয়ে অংশ নেবেন তিনি।

প্রথমবার স্বর্ণপামের লড়াইয়ে বাংলাদেশ

কান নিয়ে বাংলাদেশে মাতামাতি হয় ঢের। যদিও এর উল্লেখযোগ্য কারণ তেমন থাকে না।

শুধু ২০২১ সালে আঁ সার্তে রিগায় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর সিলেকশন। তবে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ছবিটি পুরস্কার জিততে পারেনি। এবার সত্যিকার অর্থেই কান নিয়ে মাতামাতির সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের।

কারণ প্রথমবার স্বর্ণপামের লড়াইয়ে বাংলাদেশ। কানের স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগের মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছে আদনান আল রাজীবের ‘আলী’। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় আদনান ও তাঁর সতীর্থরা উপস্থিত থাকবেন উৎসবে। ছবিটি প্রদর্শিত হবে ২৩ মে সকাল ১১টায় (সাল দুবুসি) ও দুপুর ১টায় (সাল বাজিন)। এ ছাড়া কানের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে অংশ নেবে এবাদুর রহমানের ‘বাঙালি বিলাস’।

মূল প্রতিযোগিতায় যেসব ছবি

এবার মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছে ২২টি ছবি। এ ছাড়া আঁ সার্তে রিগায় ২০টি, আউট অব কম্পিটিশনে সাতটি, মিডনাইট স্ক্রিনিংয়ে পাঁচটি, কান প্রিমিয়ারে ১০টি এবং স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে ৯টি ছবি প্রদর্শিত হবে। এবার মূল প্রতিযোগিতায় কোনো কোরীয় ছবি জায়গা পায়নি। গত এক যুগে এবারই এমনটা ঘটল। মূল প্রতিযোগিতায় এবার বিশেষ নজরে থাকবে ‘জুন মেখ’ (দ্য ইয়ং মাদারস হোম)। বেলজিয়ামের দুই সহোদর লুক দারদেন জ্যঁ-পিয়ের দারদেন বানিয়েছেন ছবিটি। এ নিয়ে দশমবার স্বর্ণপামের লড়াইয়ে ভাতৃদ্বয়। এর আগে ১৯৯৯ ও ২০০৫-এ দুইবার স্বর্ণপাম জিতেছেন তাঁরা। প্রতিযোগিতায় এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি জাপানের চিয়ে হায়াকাওয়া। তিনি থাকবেন ‘রেনোয়া’ ছবিটি নিয়ে। প্রতিযোগিতার বাইরে হলেও ‘হাইয়েস্ট টু লোয়েস্ট’ নিয়ে থাকবে সবার বিশেষ আগ্রহ। কারণ এটি নির্মাণ করেছেন স্পাইক লি। ছবিটিকে বলা হচ্ছে, জাপানের কিংবদন্তি নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়ার ‘হাই অ্যান্ড লো’র (১৯৬৩) ইংরেজি পুনর্ব্যাখ্যা। এতে আছেন অস্কারজয়ী অভিনেতা ডেনজেল ওয়াশিংটন। তিনিও হাজির হবেন কান সৈকতে।

মাসানের পর হোমবাউন্ড

২০১৫ সালে কানের আঁ সার্তে রিগায় অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হয়েছিল ভারতের নীরাজ গাইওয়ানের ‘মাসান’। এক দশক পর নতুন ছবি ‘হোমবাউন্ড’ নিয়ে পৌঁছে গেলেন একই বিভাগে। এ ছবিতে আছেন তিন তরুণ অভিনয়শিল্পী ইশান খাট্টার, জাহ্নবী কাপুর ও বিশাল জেতোয়া। গত বছর অবশ্য কানের মূল প্রতিযোগিতায় ছিল ভারতের পায়েল কাপাডিয়ার ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’। পুরস্কারও জিতেছিল। তবে এবার মূল প্রতিযোগিতায় দেশটির কোনো ছবির ঠাঁই হয়নি। এশিয়ার আরেক প্রতিনিধি হিসেবে আঁ সার্তে রিগায় জায়গা করে নিয়েছে জাপানের কেই ইশিকাওয়ার ছবি ‘আ পেল ভিউ অব হিলস’।

এবারও এগিয়ে নারী

গত বছর কানের মূল প্রতিযোগিতার জুরি বোর্ডে ৯ সদস্যের পাঁচজনই ছিলেন নারী। একই চিত্র এই আসরেও। এবারও প্রধান বিচারকের আসনে নারী—ফরাসী নির্মাতা জুলিয়েট বিনোশ। বাকি চারজন হলেন আমেরিকান নির্মাতা-অভিনেত্রী হ্যালি বেরি, ভারতীয় নির্মাতা পায়েল কাপাডিয়া, ইতালীয় অভিনেত্রী আলবা রর‍ওয়াকের ও ফরাসি-মরোক্কান লেখক লেইলা স্লিমানি। পুরুষ বিচারকদের মধ্যে আছেন কঙ্গোলিয় নির্মাতা-প্রযোজক দিয়েদো হামাদি, কোরীয় নির্মাতা হং সাংসু, মেক্সিকান নির্মাতা-প্রযোজক কার্লোস রেগাডাস ও আমেরিকান অভিনেতা জেরেমি স্ট্রং।

অসম্ভবের টম ক্রুজ

হলিউড অভিনেতা টম ক্রুজের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা সিরিজ ‘মিশন : ইম্পসিবল। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির অষ্টম ছবি ‘মিশন: ইম্পসিবল—দ্য ফাইনাল রিকনিং’ থাকছে আউট অব কম্পিটিশন বিভাগে। আগামীকাল ছবিটি দেখানো হবে। চিরচেনা চার্ম নিয়ে কানের লাল গালিচায় হাজির হবেন টম। ২০২২ সালে তিনি সম্মানসূচক স্বর্ণাপাম পেয়েছিলেন। সে বছর কানে প্রদর্শিত হয়েছিল তাঁর অভিনীত ‘টপ গান: মাভেরিক’।

দ্য গোল্ড রাশ-এর শতবর্ষ উদযাপন

নির্বাক ছবি, তবু তার আবেদন চিরদিনের। আসন্ন জুনে চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য গোল্ড রাশ’ (২৬ জুন, ১৯২৫) ছবিটির ১০০ বছর পূর্ণ হবে। এই বিশেষ মাইলফলক উদযাপন করবে কান। ধ্রুপদী বিভাগের প্রি-ওপেনিং ছবি এটি। স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় দুবুসি থিয়েটারে প্রদর্শিত হবে ছবিটির ফোর-কে ভার্সন। একই ভার্সন প্রেক্ষাগৃহেও মুক্তি পাবে ২৬ জুন।

সত্যজিৎ রায়ের অনন্য সৃষ্টি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ (১৯৭০)। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি ২০তম বার্লিন উৎসবে সেরা ছবির মনোনয়ন পেয়েছিল। এবার কানের ধ্রুপদী শাখায় দেখানো হবে ছবিটি। এটিকেও ফোর-কে করা হয়েছে। ছবিটির প্রধান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর হাজির হবেন প্রদর্শনীতে। থাকবেন প্রযোজক পূর্ণিমা দত্ত, ভারতের ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক শিবেন্দ্র সিং প্রমুখ।

প্রথমবার জোড়া পোস্টার

প্রতি বছরই কানের একটি অফিশিয়াল পোস্টার রাখা হয়। যেটা উৎসবের মূল ভবনের সামনে টানানো থাকে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি, তবে ঘটেছে বিরল ঘটনা। প্রথমবার জোড়া পোস্টার বাছাই করেছে কর্তৃপক্ষ। ফরাসি নির্মাতা ক্লদ লোলুশের কালজয়ী ছবি ‘আ ম্যান অ্যান্ড আ ওম্যান’-এর (১৯৬৬) দৃশ্য থেকে বানানো হয়েছে পোস্টার। এ দৃশ্যে রয়েছেন ফরাসি অভিনয়শিল্পী আনুক এমে ও জ্যঁ-লুই ত্রাতিনোঁ। দুটি পোস্টার উৎসব ভবনের বিভিন্ন পাশে টানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, মুক্তির বছর কান উৎসবে স্বর্ণপাম জিতেছিল ‘আ ম্যান অ্যান্ড আ ওম্যান’। পরের বছর গল্প ও চিত্রনাট্য এবং সেরা বিদেশি ভাষার অস্কার জিতেছিল।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *