বিশেষ প্রতিনিধি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঢাকায় আরেকটি সমাবেশ হচ্ছে। দাবি হচ্ছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা যারা মাঠে আছি শুধু তারাই নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের দেখতে চায় না। কারণ এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে দেশের মানুষকে নির্যাতন করে এসেছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা করেছিল, বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা সব বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু চারটা পত্রিকার খোলা রেখেছিল।
গতকাল শনিবার বিকেলে সোয়া চারটার দিকে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি তিন তরুণ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিভাগের ১১ জেলার বিএনপির তরুণ তিন সংগঠনের লক্ষাধিক নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বেলা ১২টার দিক থেকেই চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিভাগের ১১ জেলার নেতা-কর্মীরা মাঠে আসতে শুরু করেন। আনুষ্ঠানিক সমাবেশ শুরুর আগেই মাঠ কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হাতে ব্যানার, মাথায় ক্যাপ আর মুখে শ্লোগান। নেতাকর্মীদের স্লোগানে-স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে আশপাশের সড়ক। নেতাকর্মীরা ভোটের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। ব্যানার, লিফলেট, বিলবোর্ড, পোস্টারে ছেয়ে যায় চট্টগ্রাম শহর।
ফখরুল বলেন, আমরা একটা অস্বাভাবিক সময় অতিক্রম করছি। কারণ হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু তার প্রেতাত্মারা এখনো আছে তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে আবার তাদের রাজ্য তাদের রাজত্ব কায়েম করবার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তারা তা পারবে না। দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা যাদের এখন দায়িত্ব দিয়েছি, এই দেশকে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে, তারা সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। ফলে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সমস্যাগুলো তাদেরকে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। মানুষ তার অধিকারকে উপভোগ করতে চায়। আমাদের তরুণ ছেলেরা চাকরি চায়, ব্যবসা চায়, কর্মসংস্থান চায়। আমাদের দেশের মায়েরা তার ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়। আমাদের তরুণরা বিশ্ববিদ্যালয়কে চমৎকার বিদ্যাপীঠে পরিণত করতে চায়। আর দেশে একটা সত্যিকার অর্থে শান্তি বলয় প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কৃষক ভাইয়েরা তার ফসলের ন্যায্য মূল্য চায়, শ্রমিক ভাইয়েরা তাদের মজুরি চায় ঠিক মতন। একটা গণতান্ত্রিক দেশ চাই, যেখানে আমি আমার যেখানে কথা যেখানে বলতে পারব। সেই গণতন্ত্র আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
সমাবেশে চট্টগ্রামের সন্তান ও ছাত্রদল নেতা অসীম আকরামের সম্পর্কে ফখরুল বলেন, পাঠ্যপুস্তকে আবু সাঈদের নাম আছে, মুগ্ধের নাম আছে- ভালো লেগেছে কিন্তু চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরামের নাম না থাকায় আমরা দুঃখিত হয়েছি। পাঠ্যপুস্তকে সংশোধন করে তার নাম যুক্ত করারও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তরুণরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। তারা লড়াই করেছেন দেশের জনগণের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। যে অধিকারের জন্য গত ১০/১৫ বছর ধরে মানুষ প্রাণ দিয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম, খুন হয়েছে, ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতো কিছুর পরও আন্দোলন থেমে থাকে নাই। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আপনারা আন্দোলন সফল করেছেন। আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যে গণতন্ত্রের জন্য সবাই এতো ত্যাগ স্বীকার করেছি, সেই গণতন্ত্র যেন কারো কাছে জিম্মি হয়ে না পড়ে। এরকম একটা লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে, কারো স্বার্থ আদায় করা সম্ভব হবে না। তাদের যদি কোনো কর্মসূচি থাকে, দর্শন থাকে তা নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা জনগণের ম্যান্ডেট চাইবো। বাংলাদেশের জনগণ যদি আমাদের ম্যান্ডেট দেন ৩১ দফার মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার জন্য আরেক রহমান সে ঘোষণা দিয়েছেন। যারা রাস্তায় আমাদের সাথে প্রাণ দিয়েছে, জেলে গেছে তাদেরকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার হবে। এই সরকার সেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে।বাংলাদেশে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এই নির্বাচন কেউ বানচাল করতে পারবে না। আপনাদের সবাইকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। গণতন্ত্রের পথ কেউ যেন রুদ্ধ করতে না পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ওয়াসিম আকরামের পিতা শফিউল আলম বলেন, আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। আমার ছেলের সঙ্গে সকল হত্যার বিচার চাই। ১৭ বছর ধরে আমরা মিছিল মিটিং করতে পারি নাই। কোথায় করতে দেয়া হয়নি। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের পাশে আছেন। আমাদের খোঁজখবর রাখেন তারা।
জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়তা ও শক্তি রাখে। গত জুলাই-আগস্টের যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেখা আপনারাই ছিলেন অগ্রসৈনিক। স্বৈরাচারের হামলা, মামলা, নির্যাতন, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আপনারাই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল সব সময় তরুণদের সামনের সাঁড়িতে ছিলেন। প্রতিটি সংগ্রামে আমরাই রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছি, রক্ত দিয়েছি, আত্মত্যাগ করেছি কিন্তু পিছপা হয়নি।
মোনায়েম মুন্না বলেন, পরিবর্তন কখনো ক্ষমতাসীনদের দয়াই আসে না। এটি আসে সাহসী প্রজন্মের ত্যাগ, দৃঢ়তার মাধ্যমে। দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ তরুণ। এটি শুধু পরিসংখ্যান নয়, এটি সম্ভবনার প্রতীক। এই বিপল পরিমাণে তরুণ প্রজন্ম এখনো রাষ্ট্র পরিচালনার মুল স্রোত থেকে বঞ্চিত। তাদের মেধা, মনন, সৃজনশীলতা আজ অবহেলিত। বিএনপি শুধু তরুণদের ভোট নয়, তাদের নেতৃত্বও চায়। রাষ্ট্র গঠনে তাদের অংশীদারত্ব চায়।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, এক সময় গণতন্ত্রকে উন্নয়নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছিলো। এখন দেখছি গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করা দেশের তরুণ সমাজ মেনে নিবে না বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। সঞ্চালনা করছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক মো. এরশাদুল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান নাজিম প্রমুখ।
এর আগে শুক্রবার চট্টগ্রামের, চট্টেশ্বরী রোডে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।