বিশেষ প্রতিনিধি
আমরা আশা করবো আগামী দিনগুলোতে পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রফেসর ইউনুসের সরকার বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহর হোসেন চৌধুরী হলে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির উদ্যোগে মাওলানা ভাসানী ফারাক্কা লং মার্চ স্মরণে গণসমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
মেজর হাফিজ বলেন, এখন একটি নতুন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার এসেছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার মানেই দুর্বল সরকার, কারণ এদের পেছনে কোনো জনসমর্থন নেই। আমাদের দল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে বারবার বলা হয়েছে একটি নির্বাচন দিন। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অঙ্গনে যদি আমরা বাংলাদেশের মানুষের দাবিসমূহ তুলে ধরতে পারি, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আমরা যে বলিষ্ঠ ভূমিকা আশা করি ততটা পাইনি। তবুও আমরা আশা করবো আগামী দিনগুলোতে পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রফেসর ইউনুসের সরকার বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যে মানবিক করিডোরের কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ। আমরা জানি না, জনগণ জানে না, প্রতিনিধিরা জানে না কী ধরনের করিডোর দেওয়া হবে এবং এর লক্ষ্য কী। আমরা কি নতুন কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? এসব বিষয়ে তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনা করা দরকার ছিল। কিন্তু দেখি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক কথা বলেন, প্রেস সচিব আরেক কথা। জনগণ অন্ধকারে আছে, এটা কেমন ধরনের সরকার? আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে অভ্যস্ত। গণতন্ত্রের জন্যই তো আমরা ১৬ বছর সংগ্রামের পর এই মাফিয়া সরকারকে বিদায় করেছি। এখনো কেন আমরা অন্ধকারে থাকবো? সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি, কিন্তু আমরাই জানি না কিসের জন্য এই করিডোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সরকার ৭১ সালে আমাদের বন্ধু ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে আমরা লক্ষ্য করেছি, তারা ৭১-এর সময় আমাদের যে সাহায্য সহযোগিতা করেছে সেটি উদ্ধার করার জন্য অতি ব্যস্ত। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা হস্তক্ষেপ করেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রকল্পে বাংলাদেশের নতজানু সরকার, শেখ হাসিনার সরকার দেশের মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এ দেশকে ভারতের একটি কলোনি বানিয়ে দিয়েছিল। দেশের মানুষ বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে এই মাফিয়া সরকারকে অপসারণ করেছে।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, পানি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৫৪টি নদী ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রতিটি নদীর ওপর অগণিত বাঁধ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে আমাদের পানির নাব্যতা কমে গেছে। পানি ছাড়া বাংলাদেশের নদীমাতৃক দেশের কৃষককুলের করুণ অবস্থার কথা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশ অন্যান্য আগ্রাসনের মতো পানি আগ্রাসনেরও শিকার। একথাটি আমরা গত ১৬ বছর ধরে শুনিনি যে বাংলাদেশ পানি আগ্রাসনের শিকার। না শোনার কারণ হলো যারা এই আগ্রাসনের হোতা, তারা এমন একটি সরকার এখানে বসিয়ে রেখেছিল যারা বাংলাদেশের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে প্রতিবেশীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব হলো জোর যার মুল্লুক তার। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও যারা বিশ্বের সুপার পাওয়ার ছিল, তাদের মধ্যে অনেক মানবিকতা ছিল। তারা অন্যান্য দেশের কথা চিন্তা করত। জাতিসংঘেরও কিছুটা গুরুত্ব ছিল। এখন বিভিন্ন দেশে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এমন সব নেতাদের ভোটের মাধ্যমে বা বিনা ভোটে নিয়ে আসে যারা নিজের দেশ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।