যাযাদি ডেস্ক
দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে আগামী ৫ মে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে যাওয়ার সময় তিনি যে বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স পেয়েছিলেন, ফেরার পথে সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এরইমধ্যে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে দেশে ফিরছেন তিনি।
গত প্রায় চার মাস আগে গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া লন্ডনে যান। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দেন। ওই বিশেষ বিমানে (বিশেষ ধরনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) করে তিনি লন্ডন যান। ফেরার সময় একই বিমানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফিরতে পারেন এমনটা জানা গেলেও, সবশেষ বিএনপি নিশ্চিত করেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ফিরবেন তিনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন বিএনপি প্রধান এই সুবিধা পেলেন না?
সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশে আনার চেষ্টা করেছিল বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যায়।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পেলে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ৪ মে (রোববার) দেশে ফিরবেন। তবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। আমরা চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে সোমবার তিনি দেশে ফিরবেন।’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার রাজপরিবারের সঙ্গে জিয়া পরিবারের দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এরই প্রতিফলন হিসেবে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গমনকালে কাতার সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়। সেটিতে করেই তিনি লন্ডন যান। সেখানে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। পরে গত ২৫ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় যান তিনি। এরপর থেকে সেখানেই তিনি ছিলেন। ছেলের বাসাতেই তার চিকিৎসা চলে। এরপরই তিনি দেশে ফেরার উদ্যোগ নেন। এরই জেরে বিপত্তি দেখা দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বেগম জিয়া আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব পাচ্ছেন, বিষয়টা অনেকেই ইতিবাচকভাবে নেননি। এমনকি নবগঠিত একটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাতে নারাজ ছিলেন। এসব নিয়েই একটি মহল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স না দেওয়ার পক্ষে প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত কাজ,” যোগ করেন তিনি।
যদিও কাতার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও কোনো বিবৃতি দেয়নি। আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তাব বা তার প্রত্যাহার নিয়ে নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রেস উইং থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কেমন আছেন খালেদা জিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে উনি (খালেদা জিয়া) ডেফিনেটলি ভালো।”
কিভাবে দেশে ফিরছেন সে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ম্যাডামের দেশে ফেরার ব্যাপারে কাতারের আমিরের কাছ থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সটা উনাকে লন্ডনে নেয়ার জন্য পেয়েছিলাম সেটা এখন একটু বিলম্বিত হচ্ছে টেকনিক্যাল রিজিয়নস… সেজন্য ম্যাডাম ঠিক করেছেন যে, ওইটা (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) যদি শেষ মুহুর্তে না পাওয়া যায় উনি বাংলাদেশ বিমানেই আসবেন। বাংলাদেশ বিমানে আপনার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪ তারিখ( ৪ এপ্রিল) উনি রওনা হলে ইনশাল্লাহ ৫ তারিখ সকালে দেশে ১১টা দিকে এসে পৌঁছাবেন।”
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন তারই দুই পুত্রবধূ তারেক রহমানের সহধর্মিণী চিকিৎসক জুবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। দুই পুত্রবধূ ছাড়াও সফরসঙ্গী থাকবেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিনুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হক।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কয়েক দফা আবেদন করা হয়; কিন্তু তাতে সাড়া দেওয়া হয়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।