Jaijaidin

জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ

Shah Alam Soulav
5 Min Read

যাযাদি ডেস্ক

সিলেটে প্রথম টেস্টে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর জিম্বাবুয়ের কাছে ৩ উইকেটে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। যে হার নিয়ে হয়েছে প্রবল সমালোচনা। তবে দ্বিতীয় টেস্টেই স্বরূপে ফিরেছে টাইগাররা।

জিম্বাবুয়ের কাছে সাড়ে ছয় বছর পর টেস্ট হারের প্রতিশোধ তারা নিয়েছে এবার ইনিংস ব্যবধানে জিতে। চট্টগ্রাম টেস্টে সফরকারী দলকে তিনদিনেই এক ইনিংস এবং ১০৬ রানে হারিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ টাইগাররা শেষ করেছে ১-১ সমতায়।

জিম্বাবুয়ের ২২৭ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ৪৪৪ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। ফলে লিড পায় ২১৭ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামদের তোপে ৪৬.২ ওভারে ১১১ রানেই গুটিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে।

দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামা জিম্বাবুয়ে শিবিরে শুরুতেই আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই ওপেনার ব্রায়ান বেনেটকে সেকেন্ড স্লিপে সাদমান ইসলামের ক্যাচ বানান বাঁহাতি স্পিনার।

ওই ওভারের তৃতীয় বলে নতুন ব্যাটার নিকোলাস ওয়েলচকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। এতে দলীয় ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। এরপর শন উইলিয়ামস (৭) দ্বিতীয় স্লিপে সাদমানের হাতে ধরা পড়েন নাঈম হাসানের বলে।

চতুর্থ উইকেটে ১১১ বলে ৪৭ রানের প্রতিরোধগড়া জুটি গড়েন ক্রেইগ আরভিন আর বেন কারেন। অবশেষে এক ওভারে জোড়া শিকার করে জিম্বাবুয়েকে আবারও বিপদে ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

৩০তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজ বোল্ড করেন ক্রেইগ আরভিনকে (২৫), শেষ বলে এলবিডব্লিউ হন ওয়েসলে মাদভেরে (০)। নিজের পরের ওভারে আরও এক শিকার মিরাজের। এবার তার ঘূর্ণিতে শর্ট লেগে এনামুল বিজয়ের ক্যাচ তাফাজওয়া টিসিগা (০)। ৭৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে জিম্বাবুয়ে।

মিরাজ এখানেই থেমে থাকেননি। ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে ১০ রানে এবং জিম্বাবুয়ের শেষ ভরসা বেন কারেনকে দুর্দান্ত টার্নে উইকেটরক্ষক জাকের আলীর ক্যাচ বানান এই অফস্পিনার। লড়াকু কারেন ১০৩ বলে করেন ৪৬ রান।

৯৮ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর লেজের ব্যাটাররা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। দিনের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর আর মাত্র একটি উইকেট বাকি ছিল জিম্বাবুয়ের। আম্পায়াররা সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। বেশি সময় লাগেনি। ভিনসেন্ট মাসেকেসাকে সরাসরি থ্রোতে মুমিনুল হক রানআউট করলে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।

মেহেদী হাসান মিরাজ ৩২ রানে শিকার করেন ৫টি উইকেট। ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। বাকি এক উইকেট নাঈম হাসানের।

চট্টগ্রাম টেস্টে এর আগে সাদমান ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ১২৯.২ ওভারে ৪৪৪ রান করে বাংলাদেশ। আর জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছিল ২২৭ রানে।

আজ বুধবার চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। মাত্র ২.৪ ওভার খেলা হতেই বৃষ্টি নামে। ফলে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ক্রিকেটাররা।

১৫-১৬ মিনিটের বৃষ্টির পর ফের খেলা শুরু হয়। বৃষ্টি থামার পর যথারীতি ব্যাটিংয়ে নামেন বাংলাদেশ দলের দুই অপরাজিত ব্যাটার মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।

অষ্টম উইকেটে ৬৩ রানের জুটি করেন মিরাজ ও তাইজুল। টাইগারদের এই জুটি ভাঙেন জিম্বাবুয়ের অভিষিক্ত স্পিনার ভিনসেন্ট মাসেকেসা। তাইজুলকে উইকেটরক্ষক তাফাদজওয়া সিগার হাতের ক্যাচ বানান তিনি। ৩৪২ রানে ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশের। ৪৫ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তাইজুল।

নিজেদের দিন বলে কথা। সে কারণে নবম উইকেটেও দারুণ এক জুটি হয়ে গেল বাংলাদেশের। মিরাজ ও তানজিম হাসান সাকিবের ৯৬ রানের এই জুটিতে বড় সংগ্রহের আভাসই দিচ্ছিলো স্বাগতিকরা। যদিও ততক্ষণেই দলীয় সংগ্রহ ৪০০ পেরিয়ে গেছে।

৮০ বলে ৪১ রানের দারুণ ও কার্যকর ইনিংস খেলে আউট হন তানজিম সাকিব। ওয়েসলি মাধভেরের বলে নিকোলাস ওয়েলচের হাতে ক্যাচ হন সাকিব।

নতুন ও সর্বশেষ ব্যাটার হাসান মাহমুদকে নিয়ে খুব বেশি এগোতে পারেননি মিরাজ। তবে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা করে ফেলেছেন ঠিকই। মিরাজ যখন ৯৯ রানে অপরাজিত, হাসান মাহমুদ তখন স্ট্রাইপ্রান্তে। তবে জিম্বাবুইয়ান স্পিনার মাসেকেসাকে কোনোমতে ঠেকিয়ে রাখেন হাসান। পরে স্ট্রাইকে গিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিরাজ।

মিরাজ লাল বলের ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই শতকটাও তিনি করেছিলেন চট্টগ্রামে। চার বছর পর আজ বুধবার দ্বিতীয়বার তিন অংকের ম্যাজিক সংখ্যা স্পর্শ করেছেন মিরাজ। ভেন্যুও সেই একই, চট্টগ্রাম।

১৬২ বলে ১০৪ রান করে মাসেকাসের বলে স্টাম্পড হন মিরাজ। জিম্বাবুইয়ান স্পিনারকে সামনে এসে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন টাইগার ব্যাটার। তবে ব্যাটে-বলে সংযোগ না ঘটায় বল চলে যায় উইকেটরক্ষক তাফাদজওয়া সিগার হাতে। মিরাজকে ফেরাতে বাকি কাজটা তিনিই সারেন।

১৬ বল খেলেও ০ রানে অপরাজিত থাকেন হাসান মাহমুদ। এর আগে ১২০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন ওপেনার সাদমান ইসলাম।

জিম্বাবুয়ের হয়ে ১১৫ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন ভিনসেন্ট মাসেকেসা। ব্লেসিং মুজারাবানি, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, ব্রায়ান বেনেট ও ওয়েসলি মাধভেরে ১টি উইকেট নেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *