Jaijaidin

দেশের অর্থনীতি বদলাতে চট্টগ্রাম বন্দরই একমাত্র ভরসা: ড. ইউনূস

Shah Alam Soulav
5 Min Read

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের অর্থনীতি বদলাতে চট্টগ্রাম বন্দরই আমাদের একমাত্র ভরসা। বন্দরকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোনো নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে পারবে না। এর পথ না খুললে আমরা যতই লাফালাফি-ঝাঁপাঝাঁপি করি, কিছুই হবে না।

বুধবার (১৪ মে) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে একটি সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো নিজ জেলা চট্টগ্রামে এসেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সকাল সোয়া ৯টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এসময় প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান চট্টগ্রাম প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

বিমানবন্দর থেকে সরাসরি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর পরিদর্শনে আসেন প্রধান উপদেষ্টা। চট্টগ্রাম বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। শুরুতেই তিনি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ৫ নম্বর ইয়ার্ডে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দেন।

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিন্ড। ছোট্ট হৃৎপিন্ড, তার মধ্যে রোগাক্রান্ত। রক্ত সঞ্চালন হবে না। বন্দর নামের হৃৎপিন্ড বিশ্বমানের হতে হবে, অর্থনীতি সচল হবে। সারা দেশের জিনিস এখান দিয়ে বিদেশে চলে যাবে, বন্দর আরও আছে। কিন্তু এখান থেকেই সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রিত হবে। পৃথিবীর সেরা বন্দরগুলোকে ডাকা হয়েছে। এ হৃৎপিন্ড পরিবর্তন না করে দেশের অর্থনীতি পরিবর্তন হবে। নেপালের হৃৎপিন্ড নেই। আমাদের হৃৎপিন্ড দিয়ে তাদেরও চলতে হবে। তারাও লাভবান হবে আমরাও লাভবান হবো। এ হৃৎপিন্ড বাদ দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালন হবে না।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি পাল্টাতে হবে, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর ভরসা। এটা বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন অধ্যায়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, এ পথ খুলতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মতো দেশে, একটা বন্দর কয়েকটা টার্মিনাল নিয়ে কথা বলছি, এ রকম ২০-৩০টা বন্দর টার্মিনাল অনেক দেশের আছে। আমাদের হৃৎপিন্ড দিয়ে রোগী বেশি দিন টিকবে না, কাজেই এটাকে শক্তিশালী করতে হবে- এটাই চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, ভারতে স্বাস্থ্যের জন্য এখন দলে দলে যান না! নেতারা সিঙ্গাপুরে, ব্যাংককে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। বন্দর – এখানে কেউ আসতে পারবে না। আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। সেরা চিকিৎসক দিতে হবে। এ হৃৎপিন্ড ক্রমাগত শক্তিশালী ও বৃহত্তর হবে। আমাদের বড় ডাক্তার দিয়ে কাজ করতে হবে। এর জন্য টাকা পয়সা খরচ হবে না। বিল্ড অপারেট ট্রান্সফার পদ্ধতিতে তোমরা বানাও অপারেট করো, আমাদের হস্তান্তর করো। দুনিয়ার সেরা প্রতিষ্ঠান যখন বানাচ্ছে তাদের রোজগার করে টাকা তুলতে হবে। তারা আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে বানাবে। তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে। তারা যন্ত্র বানিয়ে দেবে তাদের মেয়াদ শেষে আমরা চালাবো। আমাদের টাকা লাগলো না। আমরা প্রযুক্তির শেষ মাথা থেকে শুরু করলাম।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, দ্রুত চুক্তি সই করে ফেলতে পারি, কাজ শুরু করতে পারি। আর অপেক্ষার সুযোগ নেই, ডাক্তারদের হাতে ছেড়ে দিই যাতে যেটুকু পেয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো করতে পারি। যাতে বাংলাদেশিদের স্মরণ করে, সেই গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারি। চট্টগ্রাম সওদাগরদের শহর। নৌকা নিয়ে, পালতোলা জাহাজ নিয়ে কে কোথায় চলে যাবে। পর্তুগিজরা এসেছিল। আমিও দোকানে বসেছি। তারা দেশ বিদেশে যাবে ব্যবসা করবে।

তিনি বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি জাহাজ বোঝাই ধান, চাল আসতো। আমাদের রক্ত হলো সওদাগরের রক্ত। এদের হাতে ছেড়ে দিলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায় তারা ছড়িয়ে যাবে। আমাদের রক্তের ভেতরে আছে, ঐতিহ্যের ভেতরে আসে। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। বিশাল অর্থনীতি হবে যদি চট্টগ্রাম বন্দরের হৃৎপিন্ড বিশাল হবে। যেকোনো ব্যবসায়ী এসে এখানে বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতবেগে পরিবর্তন হবে।

সফরসূচি অনুযায়ী প্রথমেই প্রধান উপদেষ্টা এখন সার্কিট হাউসে রয়েছেন। সার্কিট হাউসে তিনি কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন। এছাড়া চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দলিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন তিনি।

দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসের উদ্দেশে সার্কিট হাউস ত্যাগ করবেন ড. ইউনূস। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সমাবর্তনে ২০১১ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র দেওয়া হবে। এ অনুষ্ঠানে ২০১৫-২৫ সালের ২২ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হবে। চবি কর্তৃপক্ষ ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারির্দ্য বিমোচন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি দেবে।

পরে হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শন করার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। সেখানে তিনি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আত্নীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকাবাসীর সঙ্গে সময় কাটাবেন। সন্ধ্যায় বিমানে চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *