Jaijaidin

নিম্নচাপের প্রভাব; চট্টগ্রামে ঝড়ো হাওয়ায় উপকূলে চার জাহাজ, ফেরত গেল বিমান

Shah Alam Soulav
5 Min Read

চট্টগ্রাম ব্যুরো

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে ঝোড়ো হাওয়া বইয়ে চলেছে। এ সময়ে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে চারটি জাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উপকুলে উঠে গেছে। এমনকি ঢাকা থেকে আসা দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমান পুনরায় ঢাকায় ফেরত গেছে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালন সদস্য (পরিবহন) এনামুল করিম জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঢেউয়ের তোড়ে শুক্রবার (৩০ মে) ভোর রাতে পতেঙ্গা উপকূলে উঠে গিয়ে দুটি জাহাজ আটকা পড়েছে। জাহাজ দুটি হলো- এমভি আল-হেরেম ও বিএলপিজি সুফিয়া।

এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার আওতাধীন আনোয়ারা উপকূলেও দুটি নৌযান আটকা পড়েছে। নৌযান দুটি হলো- মারমেইড-৩ ও নাভিমার-৩। এর মধ্যে মারমেইড-৩ হলো বার্জ, নাভিমার-৩ টাগবোটের সাহায্যে এটি আনা-নেওয়া করা হয়।

বন্দরের এই কর্মকর্তা জানান, প্রায় দুই বছর আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণকাজের জন্য মারমেইড-৩ বার্জে করে ভারত থেকে বড় পাথর নিয়ে আসা হয়েছিল। এ সময় নাভিমার-৩ টাগবোটে জ্বালানি সরবরাহ করলেও কোনো বিল দেয়নি টাগবোটটির মালিকপক্ষ।

আবার নৌযান দুটির স্থানীয় প্রতিনিধি ভিশন শিপিং কো¤পানিও কোনো বিল পায়নি। এ নিয়ে অন্তত পাঁচটি মামলা হয়েছে। মামলা নি®পত্তি না হওয়ায় নৌযান দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় নোঙর করা অবস্থায় পড়ে ছিল দীর্ঘদিন ধরে।

ভিশন শিপিং কো¤পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, জাহাজটির মালিকপক্ষ কোনো সাড়া দিচ্ছে না। কোনো বিল না পেলেও প্রতিনিয়ত নৌযান দুটিতে চারজন ওয়াচম্যান বা পাহারাদার সরবরাহ করে যাচ্ছি আমরা। এতে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া তীব্র বাতাস ও ঢেউয়ের কারণে পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকতের কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে ঝড়ো হাওয়া ও সমুদ্র উত্তাল থাকার পরও বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলমান রয়েছে। যদিও বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে ব্যবহৃত লাইটার জাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিডব্লিউটিসিসি) কনভেনর সাঈদ আহমেদ।

তিনি বলেন, বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয় এ বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও কার্যক্রম সচল রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে আবহাওয়া অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বৃহ¯পতিবার (২৯ মে) রাত ৯ টা ৪৪ মিনিটে ঢাকায় ফেরত গেছে বলে জানান চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল।

তিনি জানান, বিজি১৪৭ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। তবে চট্টগ্রামে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফ্লাইটটি ঢাকায় ফিরে আসে। রাত কাটিয়ে ফ্লাইটটি শুক্রবার সকাল ৪টা ১৬ মিনিটে পুনরায় চট্টগ্রামে অবতরণ করে এবং আবহাওয়ার উন্নতি হলে সকাল ৫টা ৩১ মিনিটে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কখনও গুড়ি গুড়ি আবার কখনও মাঝারি ধরণের বৃষ্টিপাত হয়। রাতে কয়েক দফা ভারী বর্ষণও হয়। এতে পেশাজীবী মানুষ দুর্ভোগে পড়ে।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৯৮ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী আরও কয়েকদিন চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় মৎস্যজীবীদের গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাহাড় ধসের পূর্বাভাস ও পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারিদের নিরাপদে সরে যেতে চসিক থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পাহাড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। একই সাথে জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা থাকায় উপকূলবাসীদের নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।

একই কথা বলেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. সাদিউর রহিম জাদিদ। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ৬ জোনে ভাগ করে পাহাড়ের বসতি সরে যেতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মাইকিং করা হচ্ছে, সতর্ক করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ২৬টি পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়েই বাস করছেন প্রায় ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। বর্ষায় পাহাড় মরণ ফাঁদে রূপ নেয়। ধসে পড়তে পারে যে কোনো মুহূর্তে। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে তাদের দ্রুত সরে যেতে বলা হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *