বিশেষ প্রতিনিধি
নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে এত ভয় কেন, আর নির্বাচনকে নিয়ে এত ভয় কেন এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, যাদের নির্বাচন দিতে ভয়, অর্থাৎ জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জনগণ ও গণতান্ত্রিক অর্ডারের উপর তাদের কোনো আস্থা নেই। নির্বাচনে হলে কারা নির্বাচিত হবে এটা তো পরিস্কার। আজকে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নির্বাচন, সংস্কার এবং বিচার- এটা কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় না। সবগুলো কিন্তু মিউচুয়াল এক্সক্লুসিভ।’
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাস-গণতন্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, ৫-১০ দশজন লোক নিজেদেরকে বিজ্ঞ মানুষ হিসেবে মনে করে যে জনগণকে বাইরে রেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যবধানটা কোথায়? গণতন্ত্রের স্পিরিট থেকে সরে গিয়ে অনির্বাচিত সরকারের দিনগুলো যত দীর্ঘায়িত হবে, তত বেশি অস্থিতিশীল হবে। তত বেশি মানুষ অধিকারহীন হবে। অনির্বাচিত সরকার যদি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকে তাহলে তার আচরণ স্বৈরাচারের মতো হতে বাধ্য। যাদের সমর্থনে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের সেই সমর্থন কিন্তু থাকবে না। আমরা চাই সরকার একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুক।’
যে রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামীর রাজনীতি আগের রাজনীতির মতো হবে না। আগামী রাজনীতি সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনশীল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য করতে হবে। যে সমস্ত রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল এটা বুঝবে না, তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই।
আমীর খসরু বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে তিনটি শক্তি ছিল। প্রথমত- ছাত্রজনতার সমর্থন, দ্বিতীয়ত- রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন এবং তৃতীয়ত-বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী। এছাড়া শেখ হাসিনার পতনের পেছনেও এই তিনটা শক্তি কাজ করেছে। মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার সংস্কার- এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি সেদিনের সঙ্গে আজকের তুলনা করি, তাহলে কোন অবস্থান থেকে আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি? কোথায় যেন এখন একটা বিভক্তি হয়ে গেছে। এই বিভক্তির দায় কে নেবে? এটার একমাত্র কারণ হচ্ছে- যে প্রত্যাশা নিয়ে গণতান্ত্রিক অর্ডারে ফিরে যাওয়া এবং যে কাজগুলো করা দরকার ছিল, সেটা দৃশ্যমান হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, এক হাজার সংস্কার করে বাংলাদেশে কোনো লাভ হবে না। যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হয়। সংস্কারের প্রথম ধাপ হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।
সংস্কারের ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত দেখছি না বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, সংস্কারপত্র সবাই জমা দেয়ার পরেও কোন বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে, এ বিষয়গুলো জাতিকে জানানো হচ্ছে না কেন? এটা তো একটা রহস্যের ব্যাপার। সমস্যাটা কোথায়? জুলাই সনদের যে কথাটা বলা হয়েছে, সে সনদে সই করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। বাংলাদেশে এমন কোনো লোক নেই যারা আওয়ামী লীগের বিচার চায় না।
আয়োজক সংগঠনের আহবায়ক শেখ আব্দুন নুরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব বাবর চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।