যাযাদিপ্র রিপোর্ট
পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর পর্দা নেমেছে শুক্রবার। এবারের বইমেলা ছিল অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক বেশি আলোচিত-সমালোচিত। মেলা চলাকালে ঘটেছে নানা ঘটনা, যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে জনগণ। এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নানা বিষয়ে অব্যবস্থাপনার।
মেলায় জনসমাগম মোটামুটি থাকলেও ক্রেতা ছিল তুলনামূলক অনেক কম। যারা এসেছেন তারা খাবারে স্টলে গিয়ে খাওয়া আর বই হাতে নিয়ে কিংবা বই ছাড়াই নানা ভঙ্গিমায় সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। এতে হতাশা প্রকাশ করেন প্রকাশক ও লেখকরা। তাদের অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, বইমেলায় বই নয়, বরং খাবারের দোকানগুলোর ব্যবসা ভালো হয়েছে। আর মেলায় লোকজন ঘুরতে এসেছিল বেশি, বই কিনতে নয়।
এদিকে এবার মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ছিল অসন্তোষ। রাতে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বই ও টাকা চুরি হওয়ার অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক।
প্রকাশকদের দাবি, বাংলা একাডেমি যদি ভর্তুকি দিত, তাহলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যেত এবার।
মেলার শেষদিন শুক্রবারে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। অনেকে তাদের পছন্দের বই কিনেছেন। চলেছে লেখক-পাঠক আড্ডা।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় দিবাকরের সঙ্গে। তিনি এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। দিবাকর জানান, বইমেলায় এলে ভালো লাগে। পছন্দের বইগুলো কেনা সহজ হয়। মফস্বল শহরে তো সব বই পাওয়া যায় না। এবারের বইমেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো ছিল না বলে মনে হলো।
মেলা প্রাঙ্গণে কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈম বলেন, এবার যে বইমেলা হয়েছে এটাই বড় কথা। ভালোভাবে শেষ হয়েছেÑ এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা। নানা সমস্যা ছিল। বাংলা একাডেমি চাইলে সমাধান করতে পারত। এটাও সত্য, তাদের একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা ভালো ছিল না। প্রকাশকদের বিক্রি-বাট্টা মন্দ ছিল। বাংলা একাডেমি ইচ্ছে করলে ক্ষতিপূরণ দিতে পারত।
এবার মেলায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও অভাব ছিল। যত্রতত্র চিপসের প্যাকেট, পলিথিন ও কোমল পানীয়র বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভালো ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে দায়সারাভাবে।
মেলার বিশাল অংশজুড়ে ছিল বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। ক্রেতাদেরও ছিল উপচেপড়া ভিড়। অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগও তোলেন অনেকে।
সাহস প্রকাশনীর কর্ণধার নাজমুল হুদা রতন বলেন, মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই বাজে ছিল। রাতে বই চুরি হতো। মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবার আমার বেচাকেনা তিন ভাগের এক ভাগ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রকাশকদের টাকা দিয়েই তো বাংলা একাডেমি চলে। তারা ক্ষতিপূরণ দেবে কোথা থেকে?
কথা প্রকাশের ইনচার্জ মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, পাঠকরা আমাদের জানিয়েছেন এবারের মেলা অগোছালো। হকার ঢুকে গেছে। এবারের বইমেলায় তেমন একটা সাড়া পাইনি। বেচাকেনাও কম ছিল।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন বলেন, এবারের বইমেলার আয়োজনসহ সব ব্যবস্থাপনাতেই ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে আমরা বইমেলা করতে সক্ষম হয়েছি। এটাই হচ্ছে বড় সাফল্য।
তিনি আরো বলেন, বইমেলা এখন মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বইমেলা কিন্তু শুধু বই বিক্রির হাট নয়। এটি একটি মানুষের সঙ্গে পারস্পরিক মেলবন্ধের জায়গা। লেখক-পাঠকের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার জায়গা। সবকিছু মিলিয়ে বইমেলা হচ্ছে একটি সাংস্কৃতিক ইভেন্ট।