নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় কোলের শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে এক গৃহবধূকে দিনের পর দিন দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে গোটা রমজান মাস জুড়ে ধর্ষিতা ওই গৃহবধুকে ব্লাকমেইল করে একাধিকবার দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে।
সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল পূণরায় ধর্ষণ করলে ওই গৃহবধূ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এবং ঘটনাটি তার স্বামীকে জানায়। পরে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে ফতুল্লা মডেল থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, এই ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য সর্বাত্মাক চেষ্টা চলছে।
ধর্ষিতার স্বামী জানিয়েছেন, তারা বেশ কিছুদিন ধরে গাবতলী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন। বিগত রমজান শুরু হওয়ার আগে তার স্ত্রী (১৮) তার শিশু সন্তানকে নিয়ে ইসদাইর-গাবতলী লিংক রোড দিয়ে যাওয়ার সময় ইসদাইর বটতলা এলাকার আনোয়ারের ভাগিনা সজিব ওরফে বদনা সজিব, গাবতলী মাজার এলাকার কাসেম মিয়ার ছেলে রাকিব ওরফে মাইন, শফিক মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া নয়ন এবং নজরুল সহ অজ্ঞাত আরো দুইজন জোরপূর্বক ধরে নিয়ে তার শিশু সন্তানকে কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তার স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে।
এ সময় ধর্ষণকারীরা ধর্ষণের ভিডিও ধারন করে। এ সময় অপর এক নিরীহ ব্যক্তিকে ধরে এনে ব্ল্যাকমেইল করে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা রেখে দেয় এবং বলে ওই ব্যক্তি যদি এই ঘটনা কাউকে জানায় তাহলে এই মেয়ের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক আছে বলে ফাঁসিয়ে দেবে। পরবর্তীতে গোটা রমজান মাস জুড়ে ওই ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গৃহবূধকে আরো কয়েক দফা দলবদ্ধ ধর্ষণ করে।
সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল তাকে পূনরায় একই আসামীরা দলবদ্ধ ধর্ষণ করলে ওই দিন সে তার স্বামীকে জানায় এবং স্বামী-স্ত্রী ফতুল্লা মডেল থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে।
ধর্ষিতার স্বামী আরো জানিয়েছেন, ধর্ষণের সময় ওরা পৈচাশিকতায় মেতে উঠে এবং আমার স্ত্রীর উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। তার সারা শরীরে ধর্ষণকারীদের কামড়ের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে এলাকাবাসী জনায়, গত ৯ এপ্রিল মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে আসামী ধরার জন্য পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে। ওই দিন রাত দশটায় পুলিশ গাবতলী এলাকায় অভিযানে গেলে ওই এলাকার বিএনপি নেতা আবদুল্লা পুলিশকে সহযোগিতা করে।
তবে, মামলায় পরিস্কার ভাবে কাসেমের পুত্র রাকিব হাসান মাইনের নাম লিখা থাকলেও আবদুল্লা পুলিশকে স্থানীয় রিটায়ার্ড স্কুল শিক্ষক হেলাল উদ্দিন গাজীর বাড়িতে নিয়ে যায়। কারণ হেলাল মাস্টারের ছেলের নাম রাকিবুল ইসলাম।
এ সময় আবদুল্লার সহায়তায় পুলিশ গিয়ে হেলাল মাস্টারের পরিবারকে টানা দুই ঘন্টা হেনস্তা করে বলে হেলাল মাস্টার জানান। এ সময় ওই এলাকার কুখ্যাত ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী বদনা সজিবসহ প্রকৃত অপরাধীদের ব্যাপারে ওয়ার্ড বিএনপির এই সাধারণ সম্পাদক পুলিশের কাছে সাফাই গায়।
এ সময় আবদুল্লা বলে, বদনা সজিব ও তার সাঙ্গপঙ্গরা বিএনপি করে আর হেলাল মাস্টারের পরিবার আওয়ামী লীগ করে। এ বিষয়ে অতি উৎসাহী আবদুল্লা পুলিশের সঙ্গে হেলাল মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত যায়।
এতে প্রকৃত অপরাধীরা টের পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।