Jaijaidin

ফ্যাসিস্টরা বিদায় নিয়েছে কিন্তু ফ্যাসিজম রয়ে গেছে : জামায়াত আমির

Shah Alam Soulav
5 Min Read

যাযাদি ডেস্ক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জীবন বাজি রেখে যারা পরিবর্তনের জন্য লড়াই করেছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিজমকে বিদায় করা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ফ্যাসিস্টরা বিদায় নিয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিজম রয়ে গেছে। এর কালো ছায়া এখনো জাতির ঘাড়ে রয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে রাজধানী ঢাকার বনানীতে হোটেল শেরাটনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিজমকে পুরোপুরি বিদায়ের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। যার মধ্য দিয়ে একটা ন্যায্য সরকার গঠিত হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। কিন্তু নির্বাচনটা কীভাবে হবে? এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে ঐতিহাসিক অবদান।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক সর্বসম্মত রায়ের মাধ্যমে নিবন্ধন ফিরে পাওয়া উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

জামায়াত আমির বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে গ্রহণযোগ্য ফর্মুলার জন্য জামায়াতে ইসলামীর অবদানকে জাতি এখনো স্মরণ করে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে। এই জাতি স্বাধীনতার পর যখন ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছিল না, একটা স্লোগান ছিল, হোন্ডা, গুণ্ডা, ঠাণ্ডা। তখন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির ডাকসুর সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আজম প্রথম জাতির সামনে কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা দিয়েছিলেন। হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের পতনের পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কার্যত সেটা ছিল তার দেওয়া ফর্মুলায়। এবং বলা হয়, সেটাই ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এরপর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে বিশেষ সংসদ অধিবেশনের মধ্য দিয়ে। এর ভিত্তিতে ১৯৯৬, ২০০১ ও কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও ২০০৮ সালে একই ফর্মুলায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, আদালতকে ব্যবহার করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে খতম করে দেওয়া হলো। যদিও আদালতের ওই রায়ে যে রিকমেন্ডেশন ছিল তাও আওয়ামী লীগ মানেনি। পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা থাকবে কি থাকবে না সেজন্য এমিকাস কিউরিদের মতামত চাওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ এমিকাস কিউরি মতামত দিয়েছিলেন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা থাকা উচিত, বাঞ্ছনীয়। আদালত তার তোয়াক্কা করেনি। বরং সরকারের অসৎ ইচ্ছে করে পূরণ করেছে। উদ্দেশ্য একটাই কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগকে চিরতরে বাংলাদেশের ক্ষমতার মালিক বানানো। যাতে জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে। ভোটের মাঠে যেন সমতল মাঠ তৈরি না হয়। কার্যত তারই দুঃখজনক পরিণতি গত ১৫ বছর দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনই ছিল পাতানো। কোনোটা আগেই হয়েছে, কোনোটা রাতের ভোটে, কোনোটা ছিল শুধু প্রহসনের। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে দল বা প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেটা ছিল আমি ও ডামি নির্বাচন। বিরোধী নেতাদের জেলে রেখে নির্বাচন করে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করেছিল। রাজনৈতিক বন্ধুরা তখন অনেকে দ্বিধায় পড়ে যান। আর বুঝি কোনো পথ খোলা নেই। এরপরই মুক্তির পথ দেখানো শুরু করলেন আল্লাহ। ছোট্ট অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল আমাদের সন্তান ও ছেলেমেয়েরা। সেটাও নির্মম কায়দায় দমন করতে গিয়ে সরকার পা কেটেছিল।

তারা ধারণা করেছিলেন অতীতের ন্যায় গায়ের জোরে দমন করতে পারবেন। সেটা আর সম্ভব হয়নি। শুরু হয় মরণপণ যুদ্ধ। আওয়ামী লীগের পতন ঘটে। সরকারের দায়িত্বশীলরা দেশে থাকার সাহস করতে পারলেন না। আন্দোলনের মুখে অনেক সরকারের পতন ঘটেছে কিন্তু দেশ ছেড়ে পালাতে হয়নি।

তিনি আরও বলেন, পা ভাঙা, ল্যাংড়া ভূত এখনো মাঝে মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারে। বিভিন্ন কায়দায়, আকারে ইঙ্গিতে। মাঝে মধ্যে ওপার থেকে উস্কানিমূলক নির্দেশনা আসে। সবমিলে আমরা জাতি হিসেবে একটা রাজনৈতিক বাঁক অতিক্রম করছি। আমাদের দেশের লাখ লাখ যুবক বেকার। শিক্ষিতরা কেন বেকার থাকবে? জাতির চোখের আলো কেড়ে নেওয়ার জন্য কুশিক্ষাই দেওয়া হয়েছে গত ১৫ বছর। যে কারণে বেকার যুবকদের আজ ছুটোছুটি করতে হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি ন্যায়বিচার নির্ভর সমাজ গড়তে চায় যেখানে দেখা হবে না কে কোন ধর্মের কোন রঙের, ভাষার। তিনি দেশের নাগরিক এটাই তার পরিচয়। সংবিধান অনুযায়ী তিনি পূর্ণ নাগরিক। নাগরিক হিসেবে তিনি সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন।

জামায়াতে আমির বলেন, জনগণ ভালো মনে করবে তাদের সরকারে যাওয়া সুযোগ দেবে। বিরোধী দল সরকারকে সহযোগিতা করবে, ভুল ধরিয়ে দিবে। সংশোধন না করলে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।

জামায়াত বৈষম্যহীন ন্যায় বিচার চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করে সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। যেখানে জনগণ ভোট দেবে ও তার প্রতিফলন সে পাবে। ভোট নিয়ে কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং করার দুঃসাহস দেখাতে পারবে না।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *