যাযাদি ডেস্ক
পহেলগাওঁ-কাণ্ডে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনাময় পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যে রাজ্যে অসামরিক মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত।
বুধবার (৭ মে) ২৭টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ২৫৯টি স্থানে এই মহড়া হবে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি স্থানও।
১৯৭১ সালের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রথম এ ধরনের মহড়ার নির্দেশ দিল।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না, সাধারণ নাগরিকদের সচেতনতার পাঠ দিতেই দেশজুড়ে এই অসামরিক মহড়ার আয়োজন।
মূলত বিমান হামলা হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলোকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, আগামী বুধবারের মহড়ায় এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, বিমান হামলার সময়ে সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে কি না। পাশাপাশি রাতে হামলার ক্ষেত্রে খবর পাওয়া মাত্র দ্রুত সব আলো নিভিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ করে কীভাবে শত্রু বিমানবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া যায়, তার মহড়াও দেখাতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি, হামলা থেকে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো আগে থেকেই ঢেকে দেওয়া বা সেগুলোকে কত দ্রুত আড়াল করা যায় মহড়ায় তার প্রস্তুতিও সেরে রাখতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া সিভিল ডিফেন্স বা অসামরিক প্রতিরক্ষা প্রোটোকল সম্পর্কে সাধারণ জনতাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, হামলার সময়ে বা জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের মধ্যে যথাসম্ভব সমন্বয় রেখে দ্রুততার সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করে রাখতেও বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। এ জন্য জেলা প্রশাসক, অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ডদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি স্থানে হবে এই অসামরিক মহড়া। গ্রেটার কলকাতা (উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশ), হাওড়া, দুর্গাপুর, হুগলি, হলদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হাশিমারা, খড়গপুর, বার্নপুর- আসানসোল, ফারাক্কা-খেজুরিয়াঘাট, মেডিনিয়ন, চিত্তরঞ্জন, বালুরঘাট আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, দিনহাটা, মেখলি গঞ্জ, মাথাভাঙ্গা, কালিম্পং, জলঢাকা, কার্সিয়াং, কোচবিহার, বর্ধমান, দার্জিলিং, বীরভূম, জলপাইগুড়ি, মালদা পূর্ব মেদিনিপুর, পশ্চিম মদিনাপুর, শিলিগুড়ি মত এলাকাগুলোয় আপৎকালীন মহড়া চলবে।
একনজরে মহড়ায় যা করতে হবে
* বিমান হামলার সময়ে সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা।
* সাধারণ জনগণকে প্রতিরক্ষা প্রোটোকলের প্রশিক্ষণ।
* হঠাৎ আলো নিভিয়ে দিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ মহড়া।
* গুরুত্বপূর্ণ ভবন, পরিকাঠামো আগে থেকে ঢেকে দেওয়ার প্রস্তুতি।
* জরুরি অবস্থায় দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং তা অনুশীলন করা।
* নিকটবর্তী বিমানবাহিনীর ঘাঁটির সঙ্গে কার্যকরী ‘হটলাইন’ সংযোগ স্থাপন।
* ‘কন্ট্রোল রুম’ এবং ‘ছায়া কন্ট্রোল রুম’ কতটা তৈরি, তারও মহড়া।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিলে পহেলগাঁওয়ে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে আসছে দিল্লি। তবে পাকিস্তান বলে আসছে, ওই অভিযোগের কোনো প্রমাণ ভারত এখনো দেখাতে পারেনি।
নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ থেকে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। দুই দেশ থেকে নেওয়া নানান পদক্ষেপের কারণে সম্পর্ক এখন তলানিতে। রীতিমতো যুদ্ধংদেহী অবস্থা। এরইমধ্যে শূন্য নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তান ও ভারতীয় সেনাদের হালকা অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। যা পরিস্থিতিকে আরও তাঁতিয়ে তুলেছে।
ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল এবং ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। জবাবে পাকিস্তান সরকার ভারতের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে শিমলা চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্তের প্রধান প্রবেশপথটি বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান।
চলমান উত্তেজনার মধ্যেই একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান। সোমবার (৫ মে) ১২০ কিলোমিটার পাল্লার ফাতাহ সিরিজের ওই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে দেশটির সামরিক বাহিনী।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত। একইসঙ্গে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা