চট্টগ্রাম ব্যুরো
মা ও স্ত্রীকে সুখী করতে পারিনি। চিরকুট লিখে চট্টগ্রামে র্যাব কার্যালয়ে নিজের ব্যবহৃত পিস্তলের গুলিতে আত্নহত্যা করেছেন পলাশ সাহা (৩৫) নামে এক কর্মকর্তা। তিনি র্যাবের চট্টগ্রাম অঞ্চলে (র্যাব-৭) সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বুধবার (৭ মে) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও র্যাব ক্যা¤প কার্যালয়ের অফিস কক্ষ থেকে গুলিবিদ্ধ পলাশ সাহাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দুপুর ১২টার পর পলাশ সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের পাশে একটি গর্তের মতো চিহ্ন রয়েছে, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এটি গুলির আঘাত কি না, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে র্যাবের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সিএমপি ও র্যাব যৌথভাবে ঘটনাটি তদন্তে কাজ করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ফরেনসিক বিশ্লেষণের পর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও বিস্তারিত জানাবে।
জানতে চাইলে র্যাব-৭ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন, সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা কী কারণে আত্নহত্যার পথ বেছে নিলেন, সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি খুবই দায়িত্বশীল এবং পেশাদার কর্মকর্তা ছিলেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।
তিনি জানান, পলাশ সাহা বিসিএস ৩৭ ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তবে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকার সূত্রাপুরে বসবাস করেন।
এদিকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ. আর. এম. মোজাফফর হোসেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, এএসপি পলাশ সাহা বুধবার দুপুরে ইস্যু করা অস্ত্র নিয়ে কার্যালয়ে নিজের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ওই কক্ষ থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। তখন সহকর্মীরা গিয়ে কক্ষের ভেতর মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে দেখতে পান।
পিস্তলটি নিচে পড়ে ছিল। টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। ঘটনার আগে পলাশ সাহার লেখা ওই সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। এতে তিনি ব্যক্তিজীবনের হতাশার পাশাপাশি মা ও স্ত্রীকে সুখী করতে না পারার আক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন।
পলাশ সাহা চিরকুটে লিখেছেন, আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ি না। আমিই দায়ি। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে। চিরকুটের ভাষা থেকে এটিকে আত্নহত্যা হিসেবে সন্দেহ করা হলেও পুলিশ ও র্যাব বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।
ক্ষুদে বার্তায় আরো বলা হয়, পলাশ সাহাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো হবে বলেও ক্ষুদেবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও উপ-পরিদর্শক মো. আশেক বলেন, র্যাব-৭ এ দায়িত্বরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এখন উনার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে আছেন। ময়নাতদন্ত শেষে উনাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা পলাশ সাহা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৭তম ব্যাচের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি র্যাব-৭-এ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন জানান, পলাশ সাহার মৃত্যুর পেছনে ব্যক্তিগত হতাশা, পারিবারিক সমস্যা কিংবা চাকরিসংক্রান্ত কোনো চাপ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিরকুটে ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করলেও বিষয়টির পেছনে অন্য কোনো প্ররোচনা বা গাফিলতি ছিল কি না, সেটিও তদন্তাধীন। মরদেহটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।