Jaijaidin

রূপগঞ্জে অভিযানে লন্ডবন্ড মর্ডান জমিদার সিটি

Shah Alam Soulav
4 Min Read

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

ঢাকার পাশ্ববর্তী রূপগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার এক মুঠো মাটি যেন সোনার টুকরা। কিন্তু উপজেলাকে গিলে খাচ্ছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক আবাসন কোম্পানি। রয়েছে নাম সর্বস্ব ভুইফোঁড় কোম্পানিও। বড় বড় আবাসন জমি না কিনে জোরপুর্বক বালু ভরাট করে দখলে রেখেছে শতশত বিঘা কৃষি জমি। আর ভুইফোঁড় আবাসনগুলো শুধু সাইড অফিস আর সাইন বোর্ড সাটিয়েই দেদারছে চালাচ্ছে প্লট বিক্রির কার্যক্রম। শীতলক্ষ্যার পুর্বপাড়ে ভোলাব ইউনিয়ন এবং কাঞ্চন পৌরসভার মানুষজন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার। বিগত সময়ে কৃষি জমি, সরকারি খাল, খাস জমি, সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবীতে একাধিকবার আন্দোলন, মানববন্ধন ও স্বারকলিপি দিয়েছে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। কৃষকের ন্যায্য দাবীকে আমলে নিয়ে কোন কোন আবাসনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশও দিয়েছে উচ্চ আদালত। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে এসব আবাসনের কার্যক্রম।

এমন নানা অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলার মাফিয়া আবাসন রেখে শুধু চুনোপুটি আবাসনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নে বিগত ১৫ দিনে চুনোপুটি আবাসন মডার্ন জমিরদার সিটির বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে ৩ বার। চলতি মাসের ৭, ১৪ ও ২১ তারিখে দফায় দফায় অভিযানে মর্ডান জমিদার সিটির প্রধান ফটক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ও সাইডঅফিস গুড়িয়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। সর্বশেষ ২১ মে বুধবার দিনব্যাপী শতাধিক বহিরাগত লোকজন নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার ভুমি তাছবীর হোসেন। অভিযানের সময় সাইড অফিসের বিভিন্ন মালামাল জব্দের বদলে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লুটপাট করেছে বহিরাগত লোকজন। অভিযানে লন্ডবন্ড হয়েছে মডার্ন জমিদার সিটির কার্যক্রম। অথচ অধরায় রয়েছে মাফিয়া আবাসনগুলো।

স্থানীয় জমি মালিক বাবুল বলেন, জমিদার সিটির বিরুদ্ধে জবর দখল কিংবা জোরপুর্বক বালু ভরাটের কোন অভিযোগ নেই। স্থানীয় জমি মালিকদের নিয়ে জমিদার সিটির কার্যক্রম চলছে। আইনি কোন নিষেধাজ্ঞা থাকলে কর্মকর্তারা এসে অভিযানে উচ্ছ্বেদ করবে কিন্তু কর্মকর্তাদের সাথে অন্য হাউজিং এর দালালরা এসে লুটপাট বা ভাংচুর করে কিভাবে ? এটা কেমন আইন ?

জমি মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, ইউএসবাংলা ও রিমঝিম আবাসনের বিরুদ্ধে শতশত বিঘা জমি জবর দখল, কৃষি জমি ভরাট, সরকারি রাস্তা, খাস জমি ও সরকারি খাল দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন, মানববন্ধন ও স্বারকলিপি দিলেও প্রশাসনের কোন ভুমিকা দেখলাম না।

কৃষক শহিদুল্লাহ বলেন, বড় বড় কোম্পানি গুলো সিন্ডিকেট করে জমির দাম কম দেয়। কেউ বেশি দামে ক্রয় করলেই ষড়যন্ত্র শুরু করে। প্রশাসনের লোকজন হয়তো টাহা পাইয়া বড় কোম্পানিরে কিছু বলে না।

মডার্ন জমিদার সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ মিয়া জানান, স্থানীয় জমি মালিকদের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে জমিদার সিটির কার্যক্রম। কারো জমিতে জবর দখল, জোর পুর্বক সাইনবোর্ড স্থাপন কিংবা অন্যের জমিতে সাইড অফিস স্থাপনের কোন অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে নেই। তুলনামুলক মুল্য বেশি দিয়ে জমি ক্রয় করি এটাই আমাদের অপরাধ। আইনি বৈধতার সাথে আমাদের নিজস্ব জমিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা স্বত্তেও বিনা নোটিশে মর্ডান জমিদার সিটির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। সহকারী জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অমান্য করে ১৫ দিনে ৩ বার অভিযান পরিচালনা করে সকল স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এমনকি সাইড অফিসের মালামাল জব্দ না করে লুটপাট করে নিয়েছে। মডার্ন জমিদার সিটির বিরুদ্ধে আইনি জটিলতা নেই তবে হয়তো কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন কিংবা কোন আক্রোশ থেকে এমন অভিযান পরিচালনা করেছে প্রশাসন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার তাছবীর হোসেন বলেন, মডার্ন জমিদার সিটির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তাদের আইনি বৈধতা নেই। বিভিন্ন সময় নোটিশ করেও মর্ডান জমিদার সিটি বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। নানা অনিয়ম ও অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে জমিদার সিটির স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় রিমঝিম সিটির বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, নানা অভিযোগের ভিত্তিতে আবাসন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ অভিযান চলমান থাকবে। আবাসন কোম্পানি যতই শক্তিশালী হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *