চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
রোজা শুরু হয়নি এখনো। ঈদ তো বহুদুর। কিন্তু রোজা শুরুর আগেই গরম হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের ঈদের বাজার। ক্রেতায় গমগম করছে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স, অভিজাত বিপণি ফিনলে, হকার মার্কেট ও থান কাপড়ের জন্য বিখ্যাত শত বছরের পুরনো চট্টগ্রামের টেরিবাজার।
বেচাকেনাও বেশ জমে উঠেছে বলে জানান এসব মার্কেটের বিক্রেতারা। কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। বিক্রেতারা জানান, ধর্মপ্রাণ পরিবারগুলো ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলছেন এখন। রোজা শুরু হলে যেন তারা কেনাকাটার চিন্তা না করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হতে পারেন। এসব পরিবার অধিকাংশই শান্তিপ্রিয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির।
বিক্রেতাদের এসব কথার সত্যতা পাওয়া গেছে কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে। শনিবার (২২ ফ্রেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স, অভিজাত বিপনি ফিনলে, হকার মার্কেট ও টেরিবাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হয়।
এর মধ্যে টেরিবাজারে দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে আসা প্রায় ৪০ বছর বয়সি এক নারী ক্রেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ঈদে নতুন কাপড় লাগবে। কিন্তু রোজা রেখে কেনাকাটা করা অনেক কষ্টের। কেনাকাটা করতে এসে রোজা ও সালাত আদায় ব্যাহত হয়। আবার রোজা শুরু হলে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায়। বেড়ে যায় কাপড়ের দামও। তাই সব বিবেচনা করে রোজার আগেই ছেলে-মেয়েদের জন্য কেনাকাটা সেরে ফেলতে এসেছি।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেরিবাজার শুধু থান কাপড় নয়; এখানে শাড়ি, থ্রি-পিচ, টু-পিচ, শার্ট, পাঞ্জাবিসহ সব ধরনের কাপড়, গহনা, জুতা থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসের দোকান রয়েছে। পাইকারি মার্কেট হিসেবে সারা বছরই কেনাকাটা থাকে এ মাকের্টে। তবে ঈদের সময়টাতে উপচে পড়া ভিড় জমে ক্রেতাদের। আর এখন রোজার আগেই এই মার্কেটে গমগম করছে হাজার হাজার ক্রেতা।
হকার মার্কেটে কাপড় কিনতে আসা রাকিবুল হাসান (৩৬) বলেন, রোজায় হকার মার্কেটে প্রবেশ করা যায় না, এমন ভিড় জমে। আমি মধ্যবিত্ত মানুষ, হকার মার্কেট ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কাপড় কেনার সাধ্য আমার নেই। তাই আগে ভাগে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা সারতে এসেছি। ছেলে মেয়েরাও এতে খুশি।
চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সে নারিণ ফ্যাশন নামে এক দোকানে ঈদের পোশাক দেখছিলেন ৫-৬জন তরুণি। তাদের মধ্যে অন্নি নামে একজন বলেন, রোজার সময় ক্রেতার ভিড় জমে, যা আমার অসহ্য। তাই আগে-ভাগে পোশাক কিনে ফেলার চেষ্টা করছি। পোশাক পছন্দ করতে কলেজের বান্ধবীদের নিয়ে এসেছি। তবে পোশাকের দাম খুব বেশি।
এই মার্কেটে সাতরং ফ্যাশনে স্বামীকে নিয়ে ত্রিপিচ কিনছিলেন জান্নাতুল নাঈম লাকি (৩৪)। তিনি বলেন, রোজায় ক্রেতাদের ভিড়ে কেনাকাটা করতে ভাল লাগে না। তাই স্বামীকে বলে আগে-ভাগে কিনে রাখছি। রোজায় অন্তত নিশ্চিন্তে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করতে পারব।
শপিং কমপ্লেক্সের পাশে অভিজাত বিপনি ফিনলেতেও গমগম করছে ক্রেতা। এই মার্কেটের সিংহভাগ ক্রেতা তরুণ-তরুণি। তম্মধ্যে আসা নগরীর কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়ার রহমান মাহিয়া বলেন, রোজায় ক্রেতার ভিড়ের কারণে পোশাক তেমন ভালো করে দেখা যায় না। তখন দামও বেড়ে যায়। তাই আগে ভাগে কিনতে এসেছি।
অভিজাত বিপণি ফিনলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, এবার রোজার আগে ঈদের কেনাকাটায় নেমেছেন চট্টগ্রামের বহু মানুষ। মার্কেটের দোকানগুলোতে বেচা-কেনাও ভাল হচ্ছে। এখানে তরুণ-তরুণিদের পোশাক বেশি।
চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মাহবুব আলম বলেন, শপিংয়ে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবাই ঈদের কেনাকাটা করতে আসছেন। তবে এবার ঈদ তো বহুদুর, রোজার আগেই কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। যারা আসছেন তাদের মুখে শুনি রোজায় ক্রেতার ভিড়ের কারনে তারা ঈদের কেনাকাটা সারছেন। কেউ কেউ বলছেন, কেনাকাটার চিন্তায় রোজায় আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি ঠিকমত করতে পারে না। তাই কেনাকাটা করছেন।
আগাম কেনাকাটার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের টেরিবাজার ঈদমুখী বাজার। ৯০ শতাংশই এখানে কাপড়ের দোকান। শবে বরাতের পর থেকে এ পর্যন্ত বেচাকেনায় অনেক ভিড়। প্রত্যেকটা দোকানেই বেচাকেনা হচ্ছে। রোজা শুরুর পর একটু ভিড় কম থাকবে, ওই সময়ে মানুষ তারাবির নামাজে ব্যস্ত থাকে। আবার রোজা পনেরোটার পর বেচাবিক্রি ভালোই শুরু হবে। আমরা আশা করছি, এই বছর ভালো বেচাবিক্রি হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। টেরিবাজারের রাস্তাটা খুব সরু তাই যানজট নিরসনে এবং নারী ও শিশু ক্রেতাদের কেনাকাটার সুবিধার্থে আমরা সিএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করেছি। অটোরিকশা বন্ধ রাখা আর ট্রাক এই সড়কে যাতে না চলাচল করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছি।
টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, টেরিবাজারে প্রায় দুই হাজার ছোট-বড় দোকান আছে। এখানে শুধু থান কাপড় নয়, প্যান্ট-শার্ট, শাড়িসহ অন্যান্য কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে। নারীদের সব ধরনের শাড়ি, ত্রিপিচের জন্য ক্রেতারা ভিড় জমায় মাসুম ক্লথ স্টোর, বধুয়া শপিং, চিটাগাং শাড়ি হাউস, মেগামার্ট, সানা ফ্যাশন, রাজস্থান, রাজপরী, জারা শপ, আলিশা, জাবেদ ক্লথ স্টোর, বৈঠক বাজার, ভাসাবি, মনে রেখ, শাহ আমানত, পরশমনি, শিরমনি, রাঙ্গুলি, ফেমাস, হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স, মল টুয়েন্টি ফোর, মোহাম্মদীয়া, হ্যালো ফ্যাশন, গোল আহমদ, নিউ রাজস্থান, মৌচাক, আলমগীর, বাগদাদ অ্যা¤েপারিয়াম, নিউ আজমিরসহ আরও বেশ কয়েকটি নামিদামি মলে।
শনিবার বিকেলে দেখা যায়, টেরিবাজারের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে প্রায় সব দোকানেই ছিল ক্রেতা সমাগম। জমজমাট বেচাকেনা না হলেও ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী কাপড় দেখানোতে দম ফেলার ফুসরত নেই অনেক দোকানে।