নজরুল হোসেন অয়ন
গল্ফকে অনেকেই এখনো ‘অভিজাতদের খেলা’ হিসেবে ভুলভাবেচিহ্নিত করে থাকেন। এই ভ্রান্ত ধারণা বাংলাদেশের মতো দেশে গল্ফের প্রসার এবং সর্বসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জনে বড় বাধা তৈরি করে। অথচ বাস্তবতা হলো, গল্ফ একটি সবার জন্য খেলা এবং এর মানসিক ও শারীরিক উপকারিতা অপরিসীম। এই খেলার বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, যারা নিরলসভাবে গল্ফ সংস্কৃতির ভিত গড়ে তুলেছে।
বাংলাদেশে গল্ফের ইতিহাস সেনা বাহিনীর চেষ্টায়ই বিকশিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গল্ফ কোর্স নির্মাণ নিয়মিত টুর্নামেন্ট আয়োজন এবং তরুণ প্রতিভা গড়ে তোলায় তারা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। সেনা বাহিনীর এই ক্রীড়ামুখী মনোভাব এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া আজকের গল্ফ চর্চা কল্পনাও করা যেত না। সেনা সদস্যদের পাশাপাশি অনেক বেসামরিক খেলোয়াড়ও আজ সেনা বাহিনীর গড়ে তোলা অবকাঠামোর সুফল ভোগ করছেন।
গল্ফ শুধুই সামরিক কিংবা উচ্চবিত্ত সমাজের খেলা নয়। এটি একটি মননশীল ও শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং খেলা, যা সববয়সের মানুষের জন্য উপযোগী। ফুটবল বা কৃকেট যেমন সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে আজ জাতীয় উন্মাদনায় পরিণত হয়েছে, তেমনভাবেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গল্ফকেও গণমানুষের খেলায় পরিণত করা সম্ভব।
এক সময় কৃকেটও ছিল ব্যয় সাপেক্ষ এবং সীমিত সুযোগের খেলা। আজ তা দেশের প্রধানতম খেলায় রূপ নিয়েছে- শুধুমাত্র বিনিয়োগ, কৌশল এবং ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে। এই সাফল্য দেখায়, যদি ঠিকভাবে পরিকল্পনা করা যায়, গল্ফও জাতীয় ক্রীড়া সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিতে পারে।
গল্ফকে গণমুখী করতে হলে ছোটবেলা থেকেই খেলাটির সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে হবে। স্কুল, কলেজ, কমিউনিটি সেন্টার কিংবা ক্রীড়া একাডেমিগুলোতে গল্ফকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে করে একদিকে যেমন প্রতিভা তৈরি হবে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হবে একটি শক্তিশালী খেলোয়াড়দের বাহিনী, যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর উদ্যোগে দেশে অনেক উন্নতমানের গল্ফ কোর্স গড়ে উঠেছে। কিন্তু এর অনেকগুলোই সাধারণ মানুষের জন্য এখনো উন্মুক্ত নয় কিংবা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। সরকারি সহায়তা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব কোর্সকে কমিউনিটি স্পোর্টস হাবে রূপান্তর করা যেতে পারে, যেখানে সবাই গল্ফ চর্চা করতে পারবে।
গল্ফ কেবল খেলা নয়, এটি অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একটি সম্ভাবনাময় খাত। সিদ্দিকুর রহমানের মতো গল্ফাররা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছেন। এমন আরো প্রতিভা তৈরি হলে আন্তর্জাতিক স্পন্সর, টুর্নামেন্ট এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, হসপিটালিটি, ক্রীড়া প্রশিক্ষণ ট্যুরিজমসহ বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করবে। বাংলাদেশ সেনা বাহিনী যে ভিত্তি তৈরি করেছে, তা আরো বিস্তৃত করা এখন সময়ের দাবি। সরকার, কর্পরেট খাত, এবং ক্রীড়া সংগঠকদের একযোগে কাজ করতে হবে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টের আয়োজনের মাধ্যমে।
আমরা যদি গল্ফকে সবার খেলা হিসেবেপ্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে এটি শুধু একটি খেলার চেয়েও বড় কিছু হয়ে উঠবে- এটি হবেজাতীয় ঐক্যের প্রতীক, স্বাস্থ্যকর জীবনের অনুপ্রেরণা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির বাহক। সেনা বাহিনী যে পথ দেখিয়েছে, এখন সময় এসেছে দেশ জুড়ে সেই আলো ছড়িয়ে দেয়ার।
লেখক একজন গল্ফার ও ‘দি গল্ফ হাউস’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক