Jaijaidin

সরকারের মান-অভিমানের কোনো সুযোগ নেইঃ তারেক রহমান

Shah Alam Soulav
5 Min Read

বিশেষ প্রতিনিধি

হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে হলেও অবশ্যই নাগরিকদেরকে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার থাকতে হবে। দেশের জনগণ কিন্তু সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের কথা শুনতে এবং তাদের ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য। এখানের সরকারের মান-অভিমান কিংবা রাগ-বিরাগের কিন্তু কোন সুযোগ নেই।

রোববার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের ১৮ বছরে যাত্রার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রে স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিবাদ রুখে দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ, সরকার গঠিত হলে অবশ্যই সেই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রে নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়। দেশে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত থাকলে সরকারের পক্ষে ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারন করা সহজ হয় না। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সরকারের চরিত্র যাই হোক, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারি হয়ে ওঠে।

তিনি বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান এই অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈধতার হয়তো সংকট নেই। তবে অবশ্যই এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয়, সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তার রেখে শেষ পর্যন্ত কোন পরিকল্পনাই কার্যকর এবং টেকসই হয় না, হবেও না।
নিয়ম মাফিক অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছু কাজ করতে হয় উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় নিয়ম মাফিক অন্তর্বর্তী সরকারকে চলতি অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতার দেখা গিয়েছে, প্রতিটি বছর জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট হচ্ছে মূল প্রতিবন্ধকতা। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআর-এর হয়তো সরাসরি কোন ভূমিকা নেই। তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআর-এর ভূমিকা মুখ্য। এমন বাস্তবতায় বাজেট পাসের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ করেই এনবিআর-এর সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে, এটি কিন্তু আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সকলে বিশ্বাস করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্য-অযোগ্যতা বিষয় নয়। দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় একদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে, অপরদিকে এক অনিশ্চিতকর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক রকমের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। একারণে আমরা দেখছি, জনগণ প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। যদিও তাদের এই দাবি-দাওয়া শোনার জন্য এই মুহূর্তে কেউ নেই।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ এবং সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। সুতরাং দেশে-বিদেশে সম্মানিত দক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে।

তিনি বলেন, পতিত পলাতক ফ্যাসিবাদ যাতে আর কোন রূপে এবং কোন ক্রমেই ফিরতে না পারে, এই সময় সেটিই হোক বাংলাদেশের পক্ষের এবং গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য। ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ করে রাষ্ট্র সরকার এবং রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার। সময়ের প্রয়োজনে সাংবিধানিক কিংবা আইনগত সংস্কার এবং উভয় প্রকারের সংস্কারের বিকল্প নেই। অল্প সংস্কার কিংবা বেশি সংস্কার বলেও কিন্তু কিছু নেই। রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক প্রয়োজনীয় সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

এনপিপির চেয়ারম্যানস ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *