চট্টগ্রাম ব্যুরো
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাতের দিকে নদীর নাপিতের ঘাট থেকে নোয়াহাট পর্যন্ত কিছু অংশে এই ডিম পাওয়া যায় বলে জানান চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোর রাতের বৃষ্টি ও বজ্রপাতের প্রভাবে হালদা নদীতে মেজর কার্প জাতীয় মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। তবে নদীতে ঢল না নামায় পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ।
তিনি বলেন, গত ২৫ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত অমাবস্যার জো চলছে এটি চতুর্থ অমাবস্যার জো। এই সময়ের মধ্যে বজ্রবৃষ্টি ও ঢল নামলে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে। আর অনুকূল পরিবেশ না পেলে পরবর্তী পূর্ণিমার জো-তে জুন মাসে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ডিম সংগ্রহকারী মো. হোসেন ও মো. শহীদুল্লাহ জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পর মা মাছ ডিম ছেড়েছে। ভোর রাতের দিকে অল্প পরিমাণে নমুনা ডিম পেয়েছেন তারা। নমুনা ডিম মেলার খবরে নদীপাড়ের অন্য জেলেরাও নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এ জন্য তারা আল্লাহর নিকট বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের জন্য প্রার্থনা করছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এপৃল থেকে জুন মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটার যেমন: পানির তাপমাত্রা, স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদির মিথস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছাড়ে।
চলতি মৌসুমে বজ্রসহ বৃষ্টির প্রভাবে হালদা নদীতে ঢল নামলে শুরু হতে পারে মা-মাছের ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া। হালদা নদীর দুই পাড়ে প্রতিবছরের মতো নৌকা ও ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নিষিক্ত ডিম ধরার অপেক্ষায় আছেন সংগ্রহকারীরা।
তিনি বলেন, বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদা, যেখান থেকে কার্প জাতীয় মাছের সরাসরি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। হাটহাজারী-রাউজান-ফটিকছড়ি উপজেলা সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদার পোনা হ্যাচারি পোনার চেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল। ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যাচারির কুয়া ও স্থানীয়ভাবে মাটির কুয়া তৈরি করে অপেক্ষায় থাকেন, মা-মাছ কখন ডিম ছাড়বে। নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে তা থেকে রেণু ফুটিয়ে বাজারজাতের মাধ্যমে টাকা আয় করেন আহরণকারীরা। রেণু বিক্রি ও মাছ চাষের মাধ্যমে পুরো বছর জীবিকা নির্বাহ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, হালদা থেকে ডিম সংগ্রহের জন্য ৩৫০টি নৌকা, ৪০০টি জাল ও ৬৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়া সরকারিভাবে পোনা তৈরিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে অঙ্কুরীঘোনা মৎস্য বিভাগের ৬টি হ্যাচারি। মৎস্যজীবীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৬৮টি মাটির কুয়া তৈরি করেছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির তথ্যমতে, হালদা নদীতে গত ২০২৪ সালে ১ হাজার ৬৬০ কেজি মা-মাছের ডিম সংগ্রহ হয়। ২০২৩ সালে মা মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ হাজার কেজি। ২০২২ ও ২০২১ সালে ছিল এর চেয়ে কম। তবে ২০২০ সালে নদীতে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৫ হাজার কেজি। যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর নিষিক্ত ডিমের প্রতিকেজি রেণুর মূল্য দেড় লাখ টাকারও বেশি।