Jaijaidin

ঈদে যানজট নিরসনে থাকছে ড্রোন মনিটরিং

Shah Alam Soulav
8 Min Read

গাফফার খান চৌধুরী

এবার কোরবানির ঈদে যানজট নিরসনে থাকছে ড্রোন মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা। প্রস্তুত থাকছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঈদের এক সপ্তাহ আগেই মোতায়েন করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য। মহাসড়কের অর্ধশত যানজটপ্রবণ স্থানে গাড়ির গতিসীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ সব জায়গায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যানবাহন দাড়াতে দেয়া হবে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে সারা দেশের সড়ক মহাসড়কের নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে মূল মহাসড়কে কোনো ধরনের ছোট যানবাহন চলতে দেয়া হবে না। ছোট ছোট যানবাহন শুধু ফিডার রোড বা সার্ভিস লেনে যাতায়াত করতে পারবে। তবে ঢালাওভাবে নয়। সীমিত আকারে চলবে ছোট ছোট যানবাহন। মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। গতিসীমা নির্ধারণ করতে বসছে স্পিডগান চেকপোস্ট। গতি অমান্যকারী যানবাহনের প্রয়োজনে রুট পারমিট বাতিল ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র বলছে, মহাসড়কের দুই পাশে ১০ মিটার পর্যন্ত জায়গায় সব ধরনের স্থাপনে গুড়িয়ে দেয়ার কাজ চলছে। ফুটপাথে বা মহাসড়কের যান ও মানুষ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন সব দোকান বসতে দেয়া হবে না। ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। কোনোভাবেই প্রবেশ মুখে কোনো যানবাহন দাড়াতে পারবে না। এমনকি ওঠানামা করতে দেয়া হবে না। বাসগুলোতে অবশ্যই নির্দিষ্ট জায়গায় থামতে হবে। যত্রতত্র থামতে দেয়া হবে না। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করা হবে ড্রোন দিয়ে। যাতে যানজট সম্পর্কে আগাম তথ্য পওয়া যায়। যেন সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হয়। প্রতিটি টার্মিনাল থাকছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। সড়কে থাকা সব স্পিড ব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং উজ্জ্বল রঙ করার কাজ চলছে। যাতে অনেক আগ থেকেই চালকের চোখে পড়ে। এতে গাড়ির গতি কমাতে সহায়ক হবে। কমবে দুর্ঘটনাও। অনেক সময় স্পিড ব্রেকারে রঙ না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার দুই পাশের শেষ প্রান্তে থাকা উজ্জ্বল সাদা মার্কার রঙ দেয়া হচ্ছে। যে সব জায়গায় গাছ-পালা, ঘাস, লতাপাতা ও ধুলোয় ঢেকে আছে তা পরিষ্কার করার কাজ চলছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে মার্কার সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। যা অনেক দূর থেকেই চালকদের চোখে পড়ে। অধিকাংশ মহাসড়কের মাঝখানের ডিভাইডার উচু করে দেয়া হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় দেয়ার কাজ চলছে।

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, এবার সরকার ঈদুল আজহার ছুটি ১০ দিন করেছে। স্বাভাবিক কারণেই অনেক আগ থেকেই মহাসড়কে চাপ বাড়বে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তায় চাপ থাকবে সবচেয়ে বেশি। ঈদে যানজটপ্রবণ স্থান হিসেবে ঢাকার মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, ডেমরা, সায়েদাবাদ, শ্যামপুর, কদমতলী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাচপুর ব্রিজ, চট্টগ্রামের মিরসরাই, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি, ফতুল্লা, কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রিজ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, যমুনা সেতুর পূর্বপাড়, এলেঙ্গা, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-মাওনা ফেরিঘাটসহ অন্তত ৩০টি স্পটকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মারাত্মক যানজটপ্রবণ স্থানগুলোতে ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকেই মোতায়েন করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। মহাসড়কগুলোর যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ সমন্বয় করে কাজ করবে। রাস্তায় বিকল হয়ে পড়া যানবাহন সরাতে অতিরিক্ত রেকার রাখা হচ্ছে। থাকছে এম্বুলেন্স।

সূত্রটি বলছে, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের যানজট কন্ট্রোল করা সম্ভব হলে মানুষের কষ্ট অনেক কমে যাবে। কারণ এই দুটি জেলা দিয়ে অনেক জেলার মানুষ যাতায়াত করেন। আর মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, সাভার, বাইপাইল ও চন্দ্রা এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মানুষ নির্বিঘ্নে ঈদুল ফিতরের মতো আরামে গন্তব্যে যেতে পারবেন। এ ছাড়া লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ২০টি মাঝারি ধরনের যানজটৎপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি জেলা শহরে প্রায় ১০টি হালকা যানজটপ্রবণ স্থান আছে। যানজটপ্রবণ স্থানগুলো মেরামতের পাশাপাশি সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। ঈদের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগ থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাঠে নামতে প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। এই দুটি বাহিনী মাঠে থাকলে ঈদে মানুষের ন্যূনতম ভোগান্তি হয় না বলে প্রায় শতভাগ মানুষের দাবি। ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতেও সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের মাঠে রাখার দাবি করেছেন প্রায় শতভাগ মানুষ।

পুলিশ সূত্র বলছে, যানজটের পাশাপাশি সড়ক মহাসড়কের অপরাধরোধে বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছু পার্টি ও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রোধে সর্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা থাকছে। যাত্রীদের সচেতনতা বাড়াতেও টার্মিনালগুলোতে নানামুখী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মহাসড়কে পরিবহন ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি বন্ধে টহল জোরদার করা হয়েছে।

সূত্রটি বলছে, চিহ্নিত অপরাধপ্রবণ স্পটগুলোতে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। তবে ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করে। বিষয়টি মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। সম্প্রতি ঢাকা থেকে রংপুরগামী আল হামরা পরিবহনে টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীবেশে ডাকাতরা যাতে বাসে উঠতে না পারে এ জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাস ছেড়ে যাওয়ার আগে যাত্রী, চালক ও হেলপারের ছবি তুলে রাখা হবে। রাস্তা থেকে যাত্রী বহন না করতে নির্দেশনা থাকলেও অনেক চালক তা মানছেন না। কারণ ওই সব চালকের সঙ্গে অপরাধীদের যোগসাজশ থাকে।

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, সড়ক মহাসড়কের ঝুকিপূর্ণ ছিনতাই স্পটগুলোতে পুলিশ ও র‌্যাবের মোটর সাইকেল টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সর্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। মহাসড়কের চিহ্নিত ডাকাতদের ছবিসহ তালিকা প্রতিটি বাস টার্মিনালে টাঙানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ভুয়া চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতি এবং রাস্তার খানাখন্দ। ভুয়া চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ধরতে বিআরটিএ এবং হাইওয়ে পুলিশের অভিযান চলছে। আর মাদকাসক্ত চালকদের শনাক্ত করতে এলকোহল ডিটেক্টর নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।

বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) এক্সিডেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, মহাসড়কে বর্তমানে ৫০টিতে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট আছে। বর্তমানে সবচেয়ে নাম হয়ে দাড়িয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। এই বছর সবচেয়ে কড়া নজর রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ওপর। দেশে সংঘটিত দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেকই ঘটছে এখানে। মূল কারণ বাক এবং বাকে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে না রাখা।

হাইওয়ে পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের এডিশনাল ডিআইজি শামসুল আলম যায়যায়দিনকে বলেন, সড়ক মহাসড়কের নির্দিষ্ট জায়গায় যানবাহন গতি কমিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে পারবে। কোনোভাবেই গাড়ি থামতে দেয়া হবে না। নির্দিষ্ট জায়গায় যানবাহন থামতে হবে। যত্রতত্র যানবাহন থামানো যাবে না। ঈদে আগে ও পরে অন্তত এক সপ্তাহ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ থাকছে। কোনোভাবেই মহাসড়কের পাশে পশুর হাট, ভাসমান দোকান বা অন্যকোনো স্থাপনা রাখতে বা গড়তে দেয়া হবে না। সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়াও প্রতিটি ফেরিঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন থাকবে।

তিনি আরও বলেন, টোল প্লাজায় প্রবেশের আগে অবশ্যই নির্ধারিত পরিমাণ টাকা ভাঙতি রাখতে হবে। কারণ এক জনকে টাকা ভাঙতি দিতে গেলে মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে কয়েক কিলোমিটার যানজট হয়। পুলিশ ও ট্রোল প্লাজার তরফ থেকে এসংক্রান্ত আগাম মাইকিং অব্যাহত থাকবে। মহাসড়কে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক ইনামুক হক সাগর পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমের বরাত দিয়ে জানান, যানজট নানা অপরাধসহ মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হাইওয়ে থানা ও ফাড়ির জনবল বাড়ানোসহ কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশ ও র‌্যাব সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ভ্রাম্যামণ আদালত সহায়তা করবে। যানজট রোধে সড়ক মহাসড়কে পাশে থাকা অস্থায়ী ছোট-বড় বাজার বা হাট ও অন্যান্য ভাসমান ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বসতে দেয়া হচ্ছে না। যানজট নিরসনে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোনো নিত্যপণ্য বা কোরবানির পশুবাহী যানবাহনে তল্লাশি না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *