চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন নয়ারহাট এলাকার একটি পোশাক কারখানায় তৈরি হচ্ছিল পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম।
গোপনে খবর পেয়ে ওই কারখানা থেকে ২০ হাজার ৩০০ পিস পোশাক (ইউনিফর্ম) উদ্ধার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। এসময় পোশাক কারখানার মালিক সাহেদুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অপর দু‘জন হলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার।
গত ১৭ মে শনিবার নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস নামক পোশাক কারখানা থেকে ইউনিফর্মগুলো জব্দ করা হলেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি।
তবে বায়েজিদ বোস্তামী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় গত ১৮ মে ৪ জনকে আসামি করে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত মার্চে পোশাকগুলো কারখানাটিতে অর্ডার দিয়েছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তারা মংহলাসিন মারমা ওরফে মং নামে একজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরির অর্ডার নেন। মংহলাসিনকে কেএনএফ সদস্যরা তাদের কাপড়ও দিয়ে যান। চলতি মাসে পোশাকগুলো সরবরাহের কথা ছিল।
সিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি- কারখানায় তৈরি হওয়া পোশাকগুলো কুকি-চিন বিদ্রোহীদের জন্যই বানানো হচ্ছিল। অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে এই কাজ চালিয়ে আসছিল। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) মূলত বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সক্রিয় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। সংগঠনটি স্বাধীন কুকি-চিন রাজ্য গঠনের দাবি করে, যা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।
গত এক বছরে কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের একাধিক অভিযান হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি স্থাপনায় হামলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ, চাঁদাবাজি, এবং পার্বত্য এলাকায় মাদক ও অস্ত্র পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কেএনএফ কিছুদিন আগে জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সঙ্গে মিলে পার্বত্য অঞ্চলে যৌথ ট্রেনিং ক্যা¤প পরিচালনা করছিল। তবে বর্তমানে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন হয়েছে এবং কেএনএফ এখন স্বাধীনভাবে অস্ত্র ও লজিস্টিক সংগ্রহে মনোযোগী হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, বিদেশি অর্থায়ন, সীমান্তপথে চোরাচালান এবং স্থানীয় দালালচক্রের সহায়তায় কেএনএফ তাদের কার্যক্রম ও সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। এবার চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ শৃঙ্খলা গড়ে তোলার মাধ্যমে তারা শহরাঞ্চলেও সংগঠিতভাবে সক্রিয় হওয়ার প্রমাণ দিল।