Jaijaidin

বিআরআইসিএমেতে মলিক্যুলার টেস্ট বন্ধ থাকায় টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে

Shah Alam Soulav
4 Min Read

যাযাদিপ্র রিপোর্ট

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিকাল মেজারমেন্টের (বিআরআইসিএম) মলিক্যুলার (ক্যানসার জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা) টেস্ট বন্ধ রয়েছে। এতে গত তিন মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিদেশে চলে গেছে। বিদেশ থেকে টেস্টের রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি খাতের চিকিৎসাসেবা বিঘিœত হচ্ছে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাকে অফিসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রীতিমতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেন বিআরআইসিএমের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মালা খান। তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ। এক সময় বিআরআইসিএমও একই সঙ্গে ছিল। বাংলাদেশের মোটামুটি সামর্থ্যবান মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নেন। এতে দেশ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায়। বিদেশে টাকা চলে যাওয়া বন্ধ করতে বিআরআইসিএম ক্যানসার জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। কারণ বিদেশে টেস্ট করাতে অনেক সময় লেগে যায়। এতে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ে। আর স্যাম্পল বিদেশে পাঠাতে সময় লাগায় অনেক সময়ই সঠিক রিপোর্ট আসে না।

তিনি আরো বলেন, এক সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় রোগীরা যেসব স্যাম্পল দিতেন, তার অধিকাংশই পরীক্ষার জন্য বিদেশে পাঠাতে হতো। কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকদের চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশেষ করে মলিক্যুলার বা ক্যানসার জাতীয় টেস্টের স্যাম্পল পাশ্বর্বর্তী দেশগুলোয় পাঠাতে বাধ্য হতেন চিকিৎসকরা। কারণ দেশে এ জাতীয় স্যাম্পলের টেস্টের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যে হিসেবে প্রতি বছর ৯৬০ কোটি টাকা দেশ থেকে বিদেশে চলে যেত।

তিনি বলেন, ‘পরে বিআরআইসিএমের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে আমি দেশের টাকা দেশে রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নেই। বিআরআইসিএমের ল্যাবরেটরিতে ক্যানসার জাতীয় স্যাম্পলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা শুরু করি। চালু করি প্রায় সব ধরনের মলিক্যুলার টেস্ট। নির্ভুল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ক্যানসারের টেস্ট, এন্ডোটক্সিন টেস্ট, নিউরো অপটিক্যাল এনএমও, এমওজি টেস্ট, করোনার এন্টিবডি টেস্টসহ ২২০ ধরনের টেস্ট চালু করা হয়। স্যাম্পল দেয়ার ৭ দিনের মধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রিপোর্ট দেয়া হতো। সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই দেশের সরকারি-বেসরকারি হসপিটালগুলোয় চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকা শুরু করে। এমনকি গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা টাকাও সাশ্রয় হচ্ছিল। পরে তাকে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সবকিছু উল্টে যায়।’

তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন, অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ আনেন প্রতিষ্ঠানটির কিছু অসাধু সুবিধাভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ব্যাপারে পুলিশ, সিআইডি, দুদক থেকে শুরু করে সরকারের সব সংস্থা তদন্ত করে। তদন্তে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। উচ্চ আদালত পর্যন্ত তার ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ আসল বলে রায় দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, কোনো কিছুতেই পেরে না উঠে চলতি বছরের ১২ আগস্ট অব্যাহতিপত্র লিখে প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকর্তা ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে তার কাছে নিয়ে যান। সেখানে তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করানো হয়। তিনি প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত থাকলেও তাকে কোনো কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি তাকে অফিসে পর্যন্ত ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, সেখানকার এক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হওয়ার পর বর্তমান সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত দপ্তরের মহাপরিচালককে পর্যন্ত ঢুকতে দিচ্ছেন না সেখানকার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাকে নানাভাবে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে থানায় জিডি করেছেন। তিনি এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *