Jaijaidin

তেল নিয়ে তেলেসমাতি

Shah Alam Soulav
4 Min Read

এম সাইফুল ও এম এইচ সৈকত

আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে সয়াবিন তেলের গড়মূল্য। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তেলের দাম কমার কথা। কিন্তু রাজধানীসহ সারাদেশে হঠাৎ করেই যেন বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও হয়ে গেছে। আসন্ন রমজানকে টার্গেট করে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এই কৃত্রিম সংকটের জন্য দায়ী বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র। তেল নিয়ে এই তেলেসমাতিতে মাথায় হাত সাধারণ ক্রেতাদের।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুসারে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে দুই লাখ ৩২ হাজার টন, যেটা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন। গত এক বছরে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানির রেকর্ড নেই। এরপরও রোববার রাজধানীর বনশ্রী, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সয়াবিন তেল উধাও।

জানা গেছে, বর্তমানে ভোজ্যতেলের বাজারে আটটির মতো আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সক্রিয়। সবার সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। অনেকেরই ঘাটতি রয়েছে বলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যরা এই সুযোগ নিয়ে কারসাজি করছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, কম্পানিগুলো জানিয়েছে আগামী এক মাসের আগে সরবরাহ ঠিক হবে না। রমজান মাস আসার আগে এই সংকট না কাটলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে যাবে।
ক্রেতারা বলেন, পৃথিবীর সব মুসলিম দেশে রমজান এলে দ্রব্যমূল্য কমে, আর আমাদের দেশে বাড়ে। এর পেছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিশাল সিন্ডিকেট। যারা বছরের এই মাসকে টার্গেট করে তেলসহ ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। সারা বছরের মুনাফা এক মাসেই করতে চায় তারা। ফলে সাধারণ ক্রেতারা নিজেদের চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খান।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারসহ কোথাও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট নেই, দামও বাড়েনি। অথচ আমাদের দেশে দামও বেড়েছে, মালেরও সংকট। যাদের কারণে এই সংকট তৈরি হয়Ñ কোনো সরকারই তাদের রুখতে পারে না। এ কারণে সিন্ডিকেট সদস্যসহ অসাধু ব্যবসায়ীরা যুগের পর যুগ চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অসাধু কর্মকাণ্ড।

বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারে মাসভিত্তিক মূল্য তালিকা পিংক শিটের গত সপ্তাহের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের গড়মূল্য ছিল এক হাজার ৯৫ ডলার। নভেম্বরে সেটা বেড়ে হয় এক হাজার ১৪৫ ডলার। পণ্যটির বাজারে নিম্নমুখিতা ফিরে আসে ডিসেম্বরে। এ সময় পণ্যটির টনপ্রতি মূল্য নেমে আসে এক হাজার ৬৪ ডলারে। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে এই নিম্নমুখিতা অব্যাহত রেখে সয়াবিন তেলের গড়মূল্য নেমে আসে প্রতি টন এক হাজার ৬১ ডলারে।

শিকাগো বোর্ড অফ ট্রেডের (সিবিওটি) সর্বশেষ বাজার লেনদেন তথ্যের ভিত্তিতে নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, স্পট মার্কেটে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের গড়মূল্য এখন এক ডলার এক সেন্ট। সে অনুযায়ী, এর সর্বশেষ টনপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ১০ ডলার।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বোতলজাত তেল দেয়া হয় না। এ কারণে চাহিদা থাকলেও আমরা দিতে পারি না। এতে কাস্টমার আমাদের ভুল বোঝে। আসলে আমাদের মতো চুনোপুঁটি তেলের সংকট তৈরি করবে কীভাবে? এর পেছনে বড় বড় হাত রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক সময় তেল কম থাকার কারণে অনেক দোকানদার শুধু তেল বিক্রি করেন না। কারণ, আমাদের যে কাস্টমার অনেক সদাই নিয়ে থাকেন, কিংবা প্রতিদিনের কাস্টমারকে প্রাধান্য দেয়াটাই স্বাভাবিক। ফলে অতিথি কাস্টমার আর বিক্রেতার মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়।

ক্রেতারা জানান, দশ দোকান ঘুরেও এক দোকানে তেল পাই না। কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও বেশি দাম রাখা হয়। তারা আরো জানান, আসন্ন রমজানের আগেই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে রমজান এলে আমরা তো মরেই যাবো। সরকারের উচিত, এ বিষয়ে দ্রুত সাহসী পদক্ষেপ নেয়া। কারণ, এই সরকারের কাছে জনসাধারণের প্রত্যাশা অনেক।

ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, আমদানিকারকরা ভোক্তাদের ঠকিয়ে বড় মুনাফা করতে চান। বিশেষ করে রমজানসহ চাহিদা বেড়ে গেলে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি করেন তারা। সাম্প্রতিক সময় বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে এখন সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধের বিষয়ে সরকারের অনতিবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *