Jaijaidin

লাখো শোকাহত মানুষের উপস্থিতিতে সমাধিস্থ পোপ ফ্রান্সিস

Shah Alam Soulav
3 Min Read

যাযাদি ডেস্ক

সব ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার মাধ্যমে শনিবার পোপ ফ্রান্সিসকে সমাহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ। ভ্যাটিকানের সীমানার বাইরে সান্তা মারিয়া মাজ্জোরে ব্যাসিলিকায় তাকে সমাহিত করা হয়। ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো পোপকে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত করা হলো।

এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান বলেছে, এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে পোপই প্রথম, যাকে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত করা হয়েছে এবং সমাধিস্থ করার সময় শুধু পোপের নিকটতম ব্যক্তিদেরই সেখানে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি মতে, পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের জন্য এদিন ভ্যাটিকান সিটিতে কমপক্ষে চার লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল এবং তার কফিনটি দাফনের জন্য সান্তা মারিয়া মাজ্জোরে ব্যাসিলিকায় নিয়ে যাওয়া দেখার জন্য রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়েছিল। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে এবং কফিনবাহী শোকযাত্রা যে পথ ধরে সান্তা মারিয়া মাজ্জোরে গির্জায় গেছে তার দুই পাশে মানুষের ঢল নামে।

ইতালীয় সংবাদবিষয়ক অনুষ্ঠান টিজিফাইভকে তিনি বলেন, ‘আমরা অনুমান করছি, সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে উপস্থিত ও পথের পাশে থাকা লোকদের সংখ্যা চার লাখের কম নয়।’

এর আগে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের প্রার্থনা মিছিল শেষে কফিন সমাধিস্থলে পৌঁছয়।

পোপের কফিন ধীরে ধীরে এক শোকযাত্রার মাধ্যমে রোমের সান্তা মারিয়া ম্যাগিওর গির্জায় সমাহিত করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। শোকযাত্রাটি ভ্যাটিকান সিটি থেকে বেরিয়ে আরো ছয় কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়।

সাধারণ মানুষ রাস্তার দুই পাশে স্থাপিত ব্যারিকেডের পেছন থেকে শোকযাত্রাটি অনুসরণ করতে পেরেছে। তবে সরাসরি শোকযাত্রার পেছনে হাঁটার সুযোগ ছিল না।

পথে পথে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন ছিল, যারা তীর্থযাত্রীদের দিকনির্দেশনা, চিকিৎসা সহায়তা ও পানি সরবরাহ করেছে।

এই শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিশ্বনেতারা।

দক্ষিণ আমেরিকার পোপ ক্যাথলিক চার্চকে বদলে দিয়েছিলেন

পোপ ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হওয়া পর থেকেই নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। জর্জ মারিও বার্গোগলিওর জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে, বাবা মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। ফ্যাসিবাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে তার মা-বাবা তাদের জন্মভূমি ইতালি ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন।

ফ্রান্সিস ছিলেন আমেরিকা বা দক্ষিণ গোলার্ধের প্রথম পোপ ও সেন্ট পিটার্সের সিংহাসনে নির্বাচিত প্রথম জেসুইট। জেসুইটদের ঐতিহাসিকভাবে রোমে সন্দেহের চোখে দেখা হতো। ক্যামব্রিজ অভিধান অনুযায়ী, জেসুইট বলতে এমন এক রোমান ক্যাথলিক পুরোহিতকে বোঝানো হয়, যিনি সোসাইটি অব জিসাসের সদস্য। এটি এমন এক ধর্মীয় গোষ্ঠী, যাদের যাত্রা ১৫৪০ সালে শুরু হয়েছিল।

অনেক ক্যাথলিক ধরে নিয়েছিলেন, নতুন পোপ একজন তরুণ হবেন। কিন্তু ২০১৩ সালে যখন তিনি পোপ হন, তখন আর্জেন্টিনার কার্ডিনাল বার্গোগলিওর বয়স সত্তরের কোঠায় ছিল।

পোপ হিসেবে তিনি বেশ নমনীয় ছিলেন। যৌনতা বিষয়ে গোঁড়া দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন রক্ষণশীলদের কাছে আবেদন করার পাশাপাশি তিনি সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে উদারপন্থী ছিলেন। তার এমন অবস্থানের কারণে তিনি সংস্কারকদের নজর কেড়েছিলেন।

পোপ থাকাকালে তিনি আড়ম্বরের চেয়ে বিনয়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি পোপের জন্য নির্ধারিত বিলাসবহুর গাড়ি লিমোজিন ব্যবহার করেননি। তিনি বরং অন্য কার্ডিনালদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বরাদ্দ সাধারণ বাস ব্যবহার করার ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি তার ধর্মোপদেশে, সামাজিক অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান এবং সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি মনোযোগ দিতে ব্যর্থ সরকারদের সমালোচনা করেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *